একুশের মঞ্চে ভাইচুং, হরকা, সংযোগ তামাঙ্গ ও মন ঘিসিঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় একুশের মঞ্চে তখন একে একে উঠেছেন ভাইচুং ভুটিয়া, হরকাবাহাদুর ছেত্রী, সংযোগ তামাঙ্গ (মদন তামাঙ্গের ছেলে) এবং মন ঘিসিঙ্গ (সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে)। সামনে হাজির হাজার হাজার মানুষের দিকে তাকিয়ে তাঁরা হাসছেন, হাত নাড়ছেন। আর সেই ধাক্কা এসে আছড়ে পড়ছে কয়েক শো কিলোমিটার দূরে, ছ’হাজার ফুট উপরে শৈলশহর দার্জিলিঙে। যার জেরে বৃষ্টিভেজা বিকেলেও মোর্চার সদর দফতর সিংমারিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসলেন বিমল গুরুঙ্গের একান্ত অনুগামীরা।
পরে জিটিএ-র অন্যতম মুখপাত্র বিনয় তামাঙ্গ বললেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কাউকে ছোট করে দেখতে চাই না। আবার রাজনীতিতে কাউকে বাড়তি গুরুত্বও দেব না। যত জোটই হোক, পাহাড়ে যে কোনও ভোটে আমরাই জিতব।’’
কিন্তু, ব্যাপারটা যে এখন আর অত সহজ নয়, সেটা মোর্চার অনেকেই মানছেন। তাঁরা স্বীকার করছেন, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে তৃণমূল। কালিম্পঙে ব্যবধান কমেছে অনেকটা। কার্শিয়াং তো আর একটু হলে হাতছাড়া হয়ে যেত। এই অবস্থায়, আগামী বছরেই পাহাড়ে চারটি পুরসভায় ভোট। তার পরেই জিটিএ ভোট হওয়ার কথা। সেখানে জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল যদি একযোগে প্রার্থী দেয়, তা হলে অনেক আসনই মোর্চার হাতছাড়া হতে পারে, আশঙ্কায় মোর্চার নিচুতলার অনেক কর্মী। মোর্চার এক শীর্ষ নেতা জানান, আড়ালে কাছে ডাকা, নিমন্ত্রণ করাটা এক ব্যাপার। কিন্তু, তৃণমূল নেত্রী যে ভাবে নিজের সমাবেশে পাহাড়ের বিরোধী নেতাদের ডেকে আপ্যায়ন করছেন, তাতেই দুশ্চিন্তা হতে বাধ্য।
সপ্তাহখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে গিয়ে আলাদা করে সময় দিয়েছিলেন মোর্চা নেতাদের। কিন্তু জিএনএলএফ, গোর্খা লিগের নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সময় পাননি। তখন মোর্চা নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হওয়ার ক্ষীণ আশা দেখেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার শহিদ দিবসের মঞ্চে অরূপ বিশ্বাসকে (তিনি দার্জিলিঙের দলীয় পর্যবেক্ষক) দিয়ে দলনেত্রী যখন একে একে তিন জনের নাম ঘোষণা করালেন, তখনই ফের মেঘ সিংমারিতে। জিএনএলএফের মন, গোর্খা লিগের সংযোগ তামাঙ্গ ও জন আন্দোলন পার্টির হরকাকে দেখে কলকাতার মানুষ যত হইচই করল, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি চিৎকার হল পাহাড়ের নানা এলাকায় টিভির সামনে। যা দেখে গোর্খা লিগের প্রতাপ খাতি ও জিএনএলএফের মহেন্দ্র ছেত্রী জানালেন, পাহাড়ের ভোটে বিরোধী জোট জোরদার হচ্ছে। আর অরূপবাবু বলেন, ‘‘দিদিকে ঘিরে দার্জিলিংয়ের মানুষের প্রত্যাশা ক্রমশ বাড়ছে।’’