সূত্র বাইক, সোনা লুঠে পাকড়াও আট

ডাকাতির কয়েক দিন আগে কেনা হতো নতুন মোটরবাইক। ‘অপারেশন’-এর আগে পর্যন্ত তা জমা রাখা থাকত কাছাকাছি কোনও গ্যারাজে। কাজ হাসিল হয়ে গেলে সেই দামি মোটরবাইক কিছুটা দূরের কোনও গ্যারাজে রেখে দিয়ে নিজেদের গাড়ি ও ট্রেনে চেপে অন্য রাজ্যে চম্পট দিত দুষ্কৃতীরা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৩
Share:

ডাকাতির কয়েক দিন আগে কেনা হতো নতুন মোটরবাইক। ‘অপারেশন’-এর আগে পর্যন্ত তা জমা রাখা থাকত কাছাকাছি কোনও গ্যারাজে। কাজ হাসিল হয়ে গেলে সেই দামি মোটরবাইক কিছুটা দূরের কোনও গ্যারাজে রেখে দিয়ে নিজেদের গাড়ি ও ট্রেনে চেপে অন্য রাজ্যে চম্পট দিত দুষ্কৃতীরা!

Advertisement

ভিন্‌ রাজ্যে থেকে পাওয়া এই সূত্রই মিলে গিয়েছিল ডানলপ মোড়ে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানকারী একটি সংস্থায় ডাকাতির ঘটনার সঙ্গেও। আর সেই সূত্র ধরেই টানা তিন মাস ধরে অন্য রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে শেষমেশ ডানলপের ওই ডাকাতির কিনারা করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত মোট আট জনকে বিশাখাপত্তনম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল পাণ্ডা সুবোধ সিংহের খোঁজ চলছে।’’ তিনি জানান, ধৃতদের কাছ থেকে দুটি চার চাকার গাড়ি, চারটি মোটরবাইক, পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। ওই দলটি কয়েক দিন আগে বিশাখাপত্তনমেও একই কায়দায় ডাকাতির ছক কষেছিল। সেই ‘অপারেশন’-এ যাওয়ার সময়ই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা ও বিশাখাপত্তনম পুলিশের হাতে দলটি ধরা পড়ে যায়।

Advertisement

গত ৩০ ডিসেম্বর ডানলপ মোড়ের ওই ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় চার দুষ্কৃতী ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রায় ৩০ কেজি সোনার গয়না লুঠ করে। যার বাজার দর প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে দুটি নম্বর প্লেটবিহীন মোটরবাইক চেপে চার দুষ্কৃতী বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে চলে গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার কয়েক দিন পরে বালিখাল, বালিঘাট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। সেখান থেকেই মেলে নম্বর প্লেটবিহীন মোটরবাইকের হদিস। জানা যায়, মোটরবাইক দুটি বালিখালের পাশ দিয়ে বালি স্টেশনের দিকে গিয়েছে। এর পরে সেখানে হানা দিয়ে স্টেশন সংলগ্ন গ্যারাজগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় ওই দুটি মোটরবাইক।

এর পরেই মহারাষ্ট্র পুলিশের থেকে ব্যারাকপুর পুলিশ জানতে পারে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগপুরে একই কায়দায় ডাকাতি হয়েছে। এই তথ্য মেলার পরে গোয়েন্দারা অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের থেকে জানতে পারে কয়েক বছর আগে সেখানেও এমন কৌশলেই ডাকাতি হয়েছিল। পরে বিহারের ওই পুরো দলটি ধরা পরেছিল। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান জানান, অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধৃতদের ছবি-সহ অন্যান্য তথ্য মিলতেই দেখা যায় তারাই ডানলপ ও নাগপুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

গোয়েন্দারা জানান, বিহারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই দলের পাণ্ডা হল কুখ্যাত ডাকাত সুবোধ সিংহ। অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও তার নামে একাধিক ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। নাগপুরের লুঠের ঘটনার কয়েক মাস আগেই সে বোকারো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল। এর পরে তিন মাস ধরে সে ও তার দলের লোকেরা ইন্টারনেট ঘেঁটে ডালনপের এই ঋণপ্রদানকারী সংস্থা এবং গোটা এলাকার সম্পর্কে সন্ধান পায়।

অজয়বাবু জানান, ডানলপে ‘অপারেশন’ চালানোর তিন দিন আগে এ রাজ্যে আসে সুবোধ। দুটি নতুন মোটরবাইক কেনার পাশাপাশি ওই সংস্থায় গিয়ে সব জেনে আসে। আর পরেই ডাকাতির দিন ঠিক হয়। ঘটনার পরে বালি স্টেশনে বাইক দুটি রেখে এক দুষ্কৃতী সোনা ভর্তি ব্যাগটি নিয়ে বালি হল্টে চার চাকা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করা শাগরেদের সঙ্গে বিহারে চম্পট দেয়। অন্য দু’জন ট্রেনে চেপে বিহারে যায়। সেখানেই সমস্ত সোনা বিক্রি করা হয়েছে। সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান গোয়েন্দা প্রধান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement