Students Returned from Manipur

চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ, অশান্ত মণিপুর থেকে সিকিমের ঘরে ফিরলেন ৮৬ পড়ুয়া

মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি চাক্ষুষ করছেন বলে জানিয়েছেন ওই রাজ্যে পড়াশোনা করতে যাওয়া সিকিমের ৮৬ পড়ুয়া। বেশির ভাগই চিকিৎসাবিদ্যার পড়ুয়া৷ ইম্ফলে পড়াশোনা করছিলেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ ১৮:২৮
Share:

ঘরের পথে রওনা দিলেও আতঙ্ক কাটেনি পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

দিনেরবেলা কোনও রকমে কাটলেও রাতে শুরু হত বোমা-গুলির লড়াই। নিজেদের ক্যাম্পাসের বাইরে পা রাখা যেত না। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেও ছেদ পড়েছিল। মণিপুরে এমন অশান্ত পরিস্থিতি চাক্ষুষ করছেন বলে জানিয়েছেন ওই রাজ্যে পড়াশোনা করতে যাওয়া সিকিমের ৮৬ পড়ুয়া। সিকিম সরকারের সহায়তায় সোমবার একে একে নিজেদের ঘরে ফিরেছেন তাঁরা। তবে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরলেও তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

Advertisement

মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্তদের জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে রাজ্যকে সুপারিশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে মণিপুর হাই কোর্ট। তবে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান কুকি সম্প্রদায়ভুক্তরা। হাই কোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে মিছিল করে মণিপুরের ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। হিংসার জেরে মণিপুরে অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন অন্তত ২৩ হাজার।

সোমবার মণিপুরের ইম্ফল থেকে শিলিগুড়িতে পা রেখেছেন ওই পড়ুয়ারা। শিলিগুড়ি জংশনে এসএনটি (সিকিম ন্যাশনালাইজ়ড ট্রান্সপোর্ট) বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫টি বাসে করে সিকিমের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। সিকিমের বিভিন্ন এলাকার ওই বাসিন্দারা বেশির ভাগই চিকিৎসাবিদ্যার পড়ুয়া৷ ইম্ফলে পড়াশোনা করছিলেন তাঁরা। সিকিম সরকারের উদ্যোগে অগ্নিগর্ভ মণিপুরের ইম্ফল থেকে রবিবার কলকাতা পৌঁছন। সেখানে থেকে সোমবার শিলিগুড়ি ফিরেছেন তাঁরা।

Advertisement

ঘরের পথে রওনা দিলেও আতঙ্ক কাটেনি পড়ুয়াদের। কলেজ ক্যাম্পাসের পাশেই বোমা বিস্ফোরণ থেকে গুলির লড়াই দেখেছেন ইম্ফলফেরত ছিরিং লেপচা। ইম্ফলে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন তিনি। ছিরিং বলেন, ‘‘আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যে বসতিগুলো রয়েছে, রাতে সেখানে বোমা বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে গুলিচালনা, সবই ঘটেছে। সবই চাক্ষুষ করেছি। হস্টেলের সমস্ত ছাত্রছাত্রী ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতেন৷ বাইরে বেরোনোর অনুমতি ছিল না। মণিপুরের জন্য প্রার্থনা করছি, যাতে সেখানকার পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠে। তবে মণিপুরে আমাদের পড়াশোনার ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’

রাত নামলেই মণিপুরের পরিস্থিতি বিগড়ে যেত বলে দাবি তিমি থামা নামে এক পড়ুয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘দিনেরবেলা যেনতেন প্রকারে কাটলেও রাতে দুর্ভোগে পড়তে হত। বোমা-গুলির আওয়াজে তটস্থ হয়ে থাকতে হত আমাদের। মণিপুরের বহু বাসিন্দা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। বন্ধ দোকানপাট। এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের জন্য মণিপুর সরকারের কাছে আবেদন করব। আমাদের ওই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্য সিকিম সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

শিলিগুড়ি পৌঁছে খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন বহু পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পূর্ব সিকিমের বাসিন্দা প্রেম্বা তিসিং। তিনি বলেন, ‘‘ইম্ফল থেকে এমবিবিএস করছিলাম। গত ৪-৫ দিন ধরে সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চার দিকে শুধু আগুন জ্বলছে। ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ। কী ভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে গ্যাংটকের বাসিন্দা সোনম লেপচার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিনের পর থেকেই ওখানকার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠেছিল। ওই পরিস্থিতিতে কী করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না৷ তবে সিকিম সরকার যোগাযোগ করে আমাদের ঘরে ফিরিয়ে এনেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন