Calcutta High Court

Calcutta High Court: গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই, ৯২ বছরের বৃদ্ধ মামলা লড়ছেন কলকাতা হাই কোর্টে

আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য এক জন ৯২ বছরের বৃদ্ধকে আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে হচ্ছে। এটা সমাজের জন্য লজ্জার।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২১ ১৪:৫২
Share:

পাঁচড়া গ্রামের হৈমবতী মুখোপাধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

শতবর্ষ প্রাচীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক সময় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরই নির্ভর করে থাকতেন আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। অথচ বর্তমানে সেখানে নেই ন্যূনতম কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটিও। হাল ফেরাতে বার বার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে রুগ্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন গ্রামের ৯২ বছরের প্রবীণ শিক্ষক। সেখানেও তিনি দিন গুনছেন বিচারের আশায়।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রামে ১৯১৭ সালে তৈরি হয় হৈমবতী মুখোপাধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১০৪ বছরের পুরনো এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েও একসময় এখানে রমরমিয়ে চলত চিকিৎসা। বর্হিবিভাগে প্রতি দিন বসতেন ডাক্তাররা। এখন সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই দৈন্যদশা। দিনে দিনে কমতে থাকে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা। বেশ কয়েক বছর ধরে ‘শেষ সম্বল’ বলতে ছিলেন এক জন চিকিৎসক। তিনিও গত বছর ডিসেম্বরে অবসর নিয়েছেন। ফলে এখন সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মতো নেই আর কেউই। সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পরিষেবা চালু করতে এগিয়ে এলেন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনে দরবার করলেন। চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু উত্তর আসেনি। অবশেষে গত মার্চ মাসে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন ওই শিক্ষক।

১০৪ বছরের পুরনো জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফলক। নিজস্ব চিত্র

আদালতের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বড় সমস্যা হতে পারে। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসা হত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর এখন পুরোপুরি তা তালাবন্ধ। ফের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। কারণ আট-ন’টি গ্রামের মধ্যে কোনও হাসপাতাল নেই। রাতবিরেতে একমাত্র ভরসা বলতে রয়েছে আট কিলোমিটার দূরে জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র।’’

Advertisement

১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের প্রথম শুনানিতে পূর্ব বর্ধমানের জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় আদালত। দ্বিতীয় শুনানিতে আদালত জানায়, খুবই খারাপ অবস্থা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলির কাছে ফের বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় আদালত। গত বুধবার ওই মামলা ওঠে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল অবস্থার জন্য রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে তা জানতে চান বিচারপতিরা। এ নিয়ে রাজ্যকে একটি রিপোর্টও তৈরি করতে বলা হয়। মামলাকারীর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যের যে বেহাল অবস্থা এটা তার প্রমাণ। গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করতে এক জন ৯২ বছরের বৃদ্ধকে আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে হচ্ছে। এটা সমাজের কাছে লজ্জার।’’ মামলার পরবর্তী শুনানি ৫ অক্টোবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন