Goverment Health Staff

মাইকে আপত্তির শাস্তি! বাড়ি ছেড়ে সপরিবার গাড়িতে ঠাঁই কোভিডযোদ্ধার

বিশ্বকর্মাপুজোর পরের দিন মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেছিলেন মিঠু দাস। তার জেরে হুমকি ও হামলার মুখে পড়েন ওই কোভিডযোদ্ধা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:১০
Share:

সোমবার দুপুরে এনআরএস চত্বরে নিজের গাড়িতে মিঠু এবং তাঁর পরিবার — নিজস্ব চিত্র

পেশায় তিনি নার্স। বর্তমানে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত। কিন্তু ওই কোভিডযোদ্ধা নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। হাসপাতাল চত্বরে গাড়ির ভিতরে দুই নাবালক সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। শেষমেশ সোমবার বিকেলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে বাচ্চাদেরে রেখে এসেছেন। তাঁর ‘অপরাধ’ বিশ্বকর্মাপুজোর পরের দিন রাতে তিনি পাড়ায় তারস্বরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেছিলেন। তার জেরে হুমকি ও হামলার মুখে পড়েন মিঠু দাস নামে ওই কোভিডযোদ্ধা। এর পর থেকে তিনি নিজের বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। ওই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতা যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

মিঠুর বাড়ি সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এ দিন তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪-য় সেখানে জমি কিনে বাড়ি করেন। তাঁর স্বামী আনন্দ দাস ছোটখাটো ব্যবসা করেন। লকডাউনের জেরে তিনি কার্যত বেকার। তাঁর ছেলে অরিন্দম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে অমৃতা প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়তে থাকে মিঠুর কাজের চাপ। হাসপাতাল, সংসার সামলানো সব একসঙ্গে চলতে থাকে। এ দিন মিঠু হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘এক পড়শির বাড়িতে বিশ্বকর্মাপুজো ছিল গত বৃহস্পতিবার। গোটা দিনই সাউন্ড বক্স চলেছে। শুক্রবারও একই অবস্থা। রাতে মাইক বন্ধ হওয়ার বদলে আওয়াজ আরও বাড়ে। ছেলেমেয়ের পরীক্ষা চলছে। তাই আমরা মাইক বন্ধ করতে বলেছিলাম।” অভিযোগ, এর পরেই তাঁদের বাড়ির সামনে গালিগালাজ করা শুরু হয়।

মিঠুর দাবি, এর পর একপ্রকার বাধ্য হয়েই তিনি নরেন্দ্রপুর থানায় খবর দেন। ওই রাতের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আসে। মাইক বন্ধ করে দেয়। তার পরেই শুরু হয় আসল গন্ডগোল।” অভিযোগ, যাঁর বাড়িতে বিশ্বকর্মাপুজো ছিল, তিনি হাজির হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর রণজিৎ মণ্ডলের কাছে। তিনি এ বার একাধিক লোকজন নিয়ে মিঠুদের বাড়িতে আসেন। মিঠুর কথায়, ‘‘কেন আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি, তা জানতে চেয়ে ওই নেতা আমাকে হুমকি দিতে থাকেন।” তার পর কথাবার্তা বলে সে দিনের মতো গন্ডগোল সাময়িক ভাবে মিটে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডেটিং অ্যাপে নুসরতের ছবি দিয়ে বন্ধুত্বের ডাক! তদন্তে লালবাজার

কিন্তু পরের দিন অর্থাৎ শনিবার থেকে নানা ভাবে ফের মিঠুদের হুমকি দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ। গালিগালাজ করা হতে থাকে। তাঁদের হেনস্থা করতে থাকেন কাউন্সিলরের অনুগামীরা। বিষয়টি সেখানে থামেনি। মিঠুর অভিযোগ, ‘‘রবিবার রাতে ফের ওই নেতার দলবল আমাদের বাড়ির সামনে হাজির হয়। বাড়িতে ইট-পাথর ছোড়া শুরু হয়। কয়েক জন বাড়ির সদর দরজা ভেঙে ঢোকারও চেষ্টা করেন।’’ পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে ফের থানায় ফোন করেন মিঠু। পুলিশ আসে। কিন্তু পুলিশ চলে গেলেই ফের গন্ডগোল হতে পারে, এই আশঙ্কায় রাতের অন্ধকারে গাড়িতে চেপে সপরিবার বাড়ি ছাড়েন মিঠু। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভয় ছিল গাড়িতেও হামলা হবে। পুলিশ ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত গাড়ি এসকর্ট করে পৌঁছে দেয়।”

সেখান থেকে সোজা এনআরএস চত্বর। তখন রাত আড়াইটে। রাতভর গাড়িতেই থেকেছেন তাঁরা। সকালে ডিউটি করে বেলা দুটো নাগাদ গাড়িতে ফেরেন তিনি। এ দিন মিঠু বলেন, ‘‘আমার ডিপার্টমেন্টের সবাইকে গোটা ঘটনা জানিয়েছি। তাঁরা আমাকে আগামিকাল ছুটি নিতে বলেছেন। জানি না, এখন আমরা কোথায় যাব। কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে বাচ্চাদের রেখে দেব বলেই ঠিক করেছি।” মিঠুর দাবি, সকাল থেকে জল আর বিস্কুট ছাড়া কিছু জোটেনি ছোট্ট অরিন্দম এবং অমৃতার। কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে আপাতত সন্তানদের রাখার ব্যাবস্থা করে নরেন্দ্রপুর থানায় গোটা ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করতে গিয়েছেন তিনি।

সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পল্লব দাসের দাবি, তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। সব শুনে তিনি বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে, সত্যিই তা অন্যায়। কাউকে বাড়ি ছাড়া করা যায় না এ ভাবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। থানার সঙ্গেও কথা বলছি।”

আরও পড়ুন: পায়েল ঘোষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছেন রিচা চাড্ডা

যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই রনজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মাইক বাজানোর কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ওখানে একটি বাড়িতে বিশ্বকর্মাপুজো হচ্ছিল বটে, তবে মাইক বাজানো হচ্ছিল বলে আমি জানি না।” তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই মহিলার নিজের পরিবারেই অনেক গন্ডগোল রয়েছে। কয়েক মাস আগে ওঁর বাবা-মা থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেয়ের বিরুদ্ধে।” রনজিতের দাবি, ‘‘রবিবার রাতে শুনলাম এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে গন্ডগোল হচ্ছে। তখন আমি গিয়েছিলাম। দু’পক্ষকে শান্ত করে ফিরে আসি। ওঁর স্বামী তো ফোনে নরেন্দ্রপুরের আইসি-র সঙ্গে কথাও বলতে চাইছিলেন না। এর পর আমি চলে আসি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন