কিডনি দিয়ে মরণাপন্ন বন্ধু হেসাবুদ্দিনকে বাঁচানোর পণ গৃহবধূ নন্দিতার

দু’জনের বন্ধুত্ব জমে গিয়েছিল সেই স্কুলবেলাতেই।মধ্য ত্রিশে এসে শেখ হেসামুদ্দিনের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যও (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) মিলে গেল নন্দিতার। মরণাপন্ন ছেলেবেলার বন্ধুকে বাঁচাতে তাই নিজের একটি কিডনিই দান করে দিতে চলেছেন হুগলির চণ্ডীতলার আটপৌরে ওই গৃহবধূ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

মশাট শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:২২
Share:

আশ্বস্ত: মেয়েকে কোলে নিয়ে শেখ হেসামুদ্দিন। ছবি: দীপঙ্কর দে।

দু’জনের বন্ধুত্ব জমে গিয়েছিল সেই স্কুলবেলাতেই।

Advertisement

মধ্য ত্রিশে এসে শেখ হেসামুদ্দিনের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যও (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) মিলে গেল নন্দিতার। মরণাপন্ন ছেলেবেলার বন্ধুকে বাঁচাতে তাই নিজের একটি কিডনিই দান করে দিতে চলেছেন হুগলির চণ্ডীতলার আটপৌরে ওই গৃহবধূ।

অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ আলোর দেখা পেয়ে হেসাবুদ্দিনের স্ত্রী রাকিবা বলছেন, ‘‘আল্লাই নন্দিতাকে পাঠিয়েছেন।’’ আর নন্দিতার স্বামী বলছেন, ‘‘ওঁদের বন্ধুত্ব অক্ষয় হোক। আমার কোনও আপত্তি নেই।’’

Advertisement

মশাটের পঞ্চাননতলার মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা শেখ হেসামুদ্দিন ওরফে বিট্টু। পড়তেন মশাট হাইস্কুলে। নন্দিতাও ওই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। স্কুল-পর্বের পরেও দু’জনের বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। সংসার জীবনে ঢোকার পরে দু’জনের দেখাসাক্ষাৎ হতো মাঝেমধ্যে, এই যা। রাকিবাকে বিয়ের পরে হেসামুদ্দিন দিল্লির করোলবাগে চলে যান। সেখানে সোনা পালিশের কাজ করতেন। দম্পতির দুই ছেলেমেয়ে। ছ’বছরের ফারদিন আর ছ’মাসের রিয়া পরভিন। ২০১১ সালে দিল্লিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হেসামুদ্দিন। জানা যায়, কিডনির অসুখ বাসা বেঁধেছে।

আরও পড়ুন: বেশির ভাগ ক্যানসারের জন্য দায়ী খারাপ ‘ভাগ্য’, দাবি বিজ্ঞানীদের

কাজ ছেড়ে সপরিবারে মশাটে ফিরে আসেন হেসামুদ্দিন। সেই থেকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে তাঁর ডায়ালিসিস চলছে। ডাক্তার দেখাতে ছুটতে হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সম্প্রতি চিকিৎসকদের কাছ থেকে হেসামুদ্দিন জানতে পারেন, তাঁর দু’টি কিডনিই বাদ দিতে হবে। কারও কিডনি পাওয়া গেলে তিনি জীবন ফিরে পেতে পারেন।

কিন্তু কিডনি দেবে কে? প্রায় মুষড়েই পড়েছিল পরিবারটি। পাশে এসে দাঁড়ালেন নন্দিতা। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের পর কিছু সমস্যার কারণে আমি ও স্বামী খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিট্টু পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এখন ওর অসময়। আমি পাশে দাঁড়াব না! ওর সংসারটাকে তো বাঁচাতে হবে।’’

কিডনি মিললেও প্রতিস্থাপনের খরচ কম নয়। রয়েছে এ সংক্রান্ত আইনি অনুমতি এবং কাগজপত্র তৈরির পর্বও। সে সব নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। বিডিও এষা ঘোষ পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাহায্য প্রাপ্তির জন্যেও চেষ্টা চলছে। রাকিবা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অনেকের জন্য অনেক কিছু করছেন। একবার ওঁর কাছেও সাহায্যের জন্য যাব।’’

আর হেসামুদ্দিন কী বলছেন?

অসুস্থ যুবকের কথায়, ‘‘ভাগ্যে কী আছে জানি না। নন্দিতার কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন