Calcutta HighCourt

Bangladesh: নদিয়ার কিশোরী পাচার হয়ে বাংলাদেশের রংপুরে, যৌন নির্যাতনের কাহিনি শুনে উদ্বিগ্ন হাই কোর্ট

সুস্মিতা বলেন, ‘‘আদালত ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে। এর ফলে মেয়েটিকে ঘরে ফেরাতে পারব বলে আশা করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির দাবি করেছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:২৫
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রথমে প্রেম, তার পর পাচার! নদিয়ার এক নাবালিকার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তাকে পাচারের অভিযোগ উঠল বাংলাদেশের এক যুবকের বিরুদ্ধে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত ওই যুবক বেআইনি ভাবে ভারতে এসে নদিয়া জেলার একটি স্টিল কারখানায় কাজ করতেন। সেখান থেকেই নারীপাচারের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পাচারের ঘটনার বিষয়টি জেনে সোমবার বিস্ময় প্রকাশ করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। সব শোনার পর তিনি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে এই বিষয়ে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে আদালতকে। একই সঙ্গে ওই নাবালিকাকে এ দেশে ফেরত পাঠাতে এবং পরিচর্যার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছে হাই কোর্ট।

Advertisement

পুলিশ আদলতে জানিয়েছে, নদিয়ার কোতোয়ালির একটি স্টিল কারখানায় বাংলাদেশের কয়েক জন যুবক কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে মিলন হোসেন নামে ২৪ বছরের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ওই এলাকারই ১৫ বছরের এক কিশোরীর। মেয়েটি স্কুলে পড়ে। মেয়েটির মা পরিচারিকার কাজ করেন। মায়ের অজান্তেই বাংলাদেশের ওই যুবকের সঙ্গে গোপন ভাবে চলত নাবালিকার প্রেম-পর্ব। গত ২৩ জুন হঠাৎ ওই নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। খুঁজে না পেয়ে কোতোয়ালি থানায় এফআইআর করে তার পরিবার। এর পরেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মিলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মেয়েটির। সেই সূত্রেই মিলনের এক বন্ধুকে তারা গ্রেফতার করে। তার পরেই উঠে আসে একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা। ওই বন্ধু মারফৎ পুলিশ জানতে পারে, নাবালিকাকে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। এর পরেই মিলনের সঙ্গে আসা বাকি তিন বন্ধুকেও আটক করে পুলিশ। তাঁদের তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, তাঁরা সবাই অনুপ্রবেশকারী। বেআইনি ভাবে এ দেশে কাজ করতে এসেছেন।

ওই নাবালিকাকে বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে এটা নিশ্চিত জেনে সে দেশের প্রসাশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্য। জানা যায়, বাংলাদেশের সিআইডি ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তারা রাজ্যকে জানায়, ওই নাবালিকা বর্তমানে রংপুরের একটি হোম বা সংশোধনাগারে রয়েছেন। তার পর দু’দেশের প্রশাসনের তৎপরতায় মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগও করেন পরিবারের সদস্যরা। ফোনে কথা হয় তাঁদের। পরিবার পুলিশকে জানায়, ওই হোমে মেয়েটির উপর শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন চলছে। মেয়েটিকে দেশে ফেরাতে রাজ্য ও কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করে পরিবার। পুরো ঘটনার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি মান্থা। নির্দেশ দেন, ওই নাবালিকাকে ফেরাতে কেন্দ্রকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। ইন্টারপোল ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কেও এই মামলায় যুক্ত করা হয়। তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে তা জানতে চেয়েছে আদালত। পাশাপাশি বিচারপতি মান্থা তাঁর নির্দেশে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে অনুরোধ করেন, ওই হোম থেকে মেয়েটিকে অন্যত্র স্থানান্তর এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

Advertisement

এই মামলায় নাবালিকার হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত এবং আইনজীবী নীলাদ্রি সাহা। সুস্মিতা বলেন, ‘‘আদালত ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে। এর ফলে মেয়েটিকে ঘরে ফেরাতে পারব বলে আশা করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির দাবি করেছি। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন