জলদাপাড়ার জঙ্গলে গন্ডারের দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
সঙ্গিনীর দখল পেতে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে প্রাণ গিয়েছে জলদাপাড়ার ডাকাবুকো দাঁতাল বাঁয়া গণেশের। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জলদাপাড়়ার জঙ্গলে মিলল একটি গন্ডারের দেহ। তার মৃত্যুর পিছনেও সেই প্রেমেরই সংঘাত। এমনটাই অনুমান বনদফতরের। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “জঙ্গলে পুরুষ ও স্ত্রী গন্ডারের আনুপাতিক হার এখন সমান সমান। যার ফলে সঙ্গিনী নিয়ে লড়াইয়ের জেরে এই ঘটনা হতে পারে। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।” গন্ডার মেরে ভাণ্ডার লুঠে প্রতিদ্বন্দ্বী সফল হয়েছে কি না সেই খোঁজও চলছে।
শুক্রবার বিকেলে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলং জঙ্গলে গন্ডারটির মৃতদেহ দেখতে পান বনকর্মীরা। তাঁরা জানান, জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের পাঁচ নম্বর কম্পার্টমেন্টে গন্ডারটির মৃতদেহ মেলে। শনিবার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মৃত গন্ডারটির খড়গ ছিল। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই আঘাতের নমুনা দেখে বনকর্তাদের অনুমান, অন্য কোনও পুরুষ গন্ডারের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরেই তার ওই পরিণতি। আর পছন্দের সঙ্গিনীর দখল নিয়ে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ওই ঘটনার সঙ্গে চোরাশিকারিদের যোগসাজসের কোনও সম্ভাবনা নেই। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “অন্য পুরুষ গন্ডারের সঙ্গে লড়াইয়েই এই গন্ডারটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া ও গরুমারার জঙ্গলেই মূলত গন্ডারের বাসস্থান। কয়েক দশক আগে জলদাপাড়ায় গন্ডারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। এখন দুই জঙ্গল মিলিয়ে আড়াইশোর বেশি গন্ডার রয়েছে। এক বন কর্তার কথায়, ‘‘একটি পুরুষ গন্ডারের অনুপাতে অন্তত তিনটি স্ত্রী গন্ডার থাকলে এই হার ঠিকঠাক থাকে। নিজেদের মারপিটের আশঙ্কাও কম থাকে। এখন অনুপাত প্রায় সমান সমান হওয়ায় সমস্যাটা বাড়ছে।’’ পরিবেশপ্রেমী মহলেও এই পরিসংখ্যান ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “সঙ্গিনী বা এলাকা দখল নিয়ে গোলমাল বন্যপ্রাণীদের মধ্যে নতুন নয়। তবে যে কোন কারণেই হোক গন্ডারের মৃত্যু উদ্বেগের। ওই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার।”