মোড় ঘুরতেই দেখি সামনে জ্বলছে গাড়ি

রবিবার সকালে লেবঙের রাস্তায় একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বালাসন গেটের কাছে হামলা হয় আরও একটি গাড়িতে। অনেক গাড়িচালককেই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফলে আতঙ্কিত চালকরা অনেক ক্ষেত্রেই এই ভাবে মাঝপথে বেঁকে বসেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

কার্শিয়াং শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

বন্ধের ১০১তম দিন। অল্প সময়ের জন্য খুলল গ্লেনারিজ। রবিবার দার্জিলিঙে। —নিজস্ব চিত্র।

সমতল থেকে পাহাড়ি পথে গাড়ি চাকা গড়াতেই রোদের তাপ কমে এল। কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে গাড়ির সামনের কাচ। চালকের মোবাইল বেজে উঠল। সামান্য কিছু কথা। তার পরেই জানিয়ে দিলেন, দার্জিলিং পর্যন্ত গাড়ি যাবে না। কার্শিয়াঙেই নামতে যেতে হবে। দার্জিলিঙের ভাড়া দেওয়া যাত্রীদের হাজারো অনুরোধ ঠেলে তাঁর একটাই জবাব, ‘‘ওই রাস্তায় ঝামেলা আছে!’’

Advertisement

রবিবার সকালে লেবঙের রাস্তায় একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বালাসন গেটের কাছে হামলা হয় আরও একটি গাড়িতে। অনেক গাড়িচালককেই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফলে আতঙ্কিত চালকরা অনেক ক্ষেত্রেই এই ভাবে মাঝপথে বেঁকে বসেন।

অথচ যাত্রী কম ছিল না। এ দিন থেকে দার্জিলিঙে দোকান-বাজার খোলা হবে— এই ঘোষণায় সকালেই শিলিগুড়ি জংশন এলাকায় জড়ো হন অনেকে। তাঁদেরই এক জন রাজকিশোর যাদব। গয়না তৈরির দোকানে কাজ করেন। বললেন, ‘‘গত কাল (শনিবার) মালিক ফোন করে ডেকেছেন। তিন মাস পরে কাজে যাচ্ছি।’’ পোশাক ব্যবসায়ী নিমা শেরপা রবিবার সকালে শিলিগুড়ি এসেছিলেন বাজার চলতি পোশাক নিয়ে যেতে। কিন্তু তিন পেটি মাল নামিয়ে কার্শিয়াঙে নামতে হলো তাঁকেও। কার্শিয়াং দেখে কিন্তু বোঝার উপায় নেই, পাহাড়ে বন্‌ধ চলছে। স্টেশনের সামনে সব দোকানই প্রায় খোলা। টিএন রোডের একটি নামী মিষ্টির দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। যা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নিমা—‘‘এই ছবি যদি দার্জিলিঙেও দেখা যেত! মোবাইলে জানতে পারলাম, ওখানে এখনও হুমকি দিয়ে পোস্টার পড়ছে।’’

Advertisement

অপেক্ষায় কাটল দু’ঘণ্টা। কেউই আর যেতে রাজি হচ্ছেন না দার্জিলিঙে। ‘মেডিক্যাল টিম’ বা ‘অন্ত্যেষ্টি’ স্টিকার লাগিয়ে কিছু গাড়ি যাচ্ছে বটে, কিন্তু অপরিচিত কাউকে তারা গাড়িতে তুলতে নারাজ।

শেষে এক পুলিশের হস্তক্ষেপে রাজি করানো গেল এক জনকে। চড়া দর হাঁকলেন। শর্ত দিলেন, সন্ধ্যের আগেই দার্জিলিং থেকে রওনা দিতে হবে। কার্শিয়াং পেরিয়ে সোনাদার পথ ধরতেই কুয়াশার চাদর। হঠাৎই ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ি। রাস্তার ধারে হাত দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। চেঁচিয়ে বললেন, ‘‘যাবেন না, সামনে ঝামেলা হচ্ছে।’’ নিষেধ না শুনে চটকপুরের রাস্তা ধরে বাঁক ঘুরতেই ফের ধাক্কা। সুনসান রাস্তায় একটা গাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে। কুয়াশা ছাপিয়ে কালো ধোয়ায় ভরেছে চার দিক। গাড়িচালক মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘‘দেখতেই পাচ্ছেন কী অবস্থা। আর যাওয়া সম্ভব নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন