woman

পাভলভে সেরে তরুণী ফিরলেন ইম্ফলের ঘরে

পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ঘেরাটোপে টানা ৭-৮ মাস থাকতে থাকতে তাই এক রকম হাঁপিয়েই ওঠেন ২২ বছরের মেয়ে মণিপুরের বাসেই ফিরোজা সাহানি।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

বাসেই ফিরোজা সাহানি।

নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনে বাড়ি ফেরাটা হাসপাতালের আবাসিকদের অধিকার। কিন্তু বাড়ি দূরে, আত্মীয়েরা সঙ্গতিহীন বলে তাঁর ক্ষেত্রে সেই অধিকারের প্রয়োগ কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ঘেরাটোপে টানা ৭-৮ মাস থাকতে থাকতে তাই এক রকম হাঁপিয়েই ওঠেন ২২ বছরের মেয়ে মণিপুরের বাসেই ফিরোজা সাহানি। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বুধবার বিমানযোগে তাঁকে ইম্ফলের বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

২০১৭ সালের নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী কাউকেই অনির্দিষ্ট কাল মানসিক হাসপাতালে আটকে রাখা যায় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি, পরিজন, সামাজিক সঙ্গতি নেই ইত্যাকার কারণ দেখিয়েও তাঁকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এখনও নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা বা আর্থিক সংস্থান নেই। তাই সুস্থ হওয়ার পরেও বৃহত্তর সমাজজীবন থেকে দূরে মানসিক হাসপাতালে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পড়ে থাকাটাই আবাসিকদের ভবিতব্য হয়ে ওঠে। মণিপুরের মেয়ে, কলকাতার হাসপাতালের আবাসিক ফিরোজার ক্ষেত্রেও সেটাই ‘স্বাভাবিক’ ছিল। তবে তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। পাভলভে পরিচর্যা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠার পরে নবনিযুক্ত মেডিক্যাল সুপার মৃগাঙ্কমৌলী কর বলেন, “আবাসিকদের ভালর জন্য আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা নিয়েছি। হাসপাতালে আমাদের সহযোগী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ফিরোজাকে বাড়ি পাঠানো গিয়েছে।”

হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাওড়া স্টেশনে ফিরোজাকে দিশাহারা হয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে পাভলভে পাঠায়। জানা যায়, বাসে ইম্ফল থেকে গুয়াহাটি পৌঁছে ট্রেনে দিল্লি যেতে চেয়েছিলেন ফিরোজা। সেখানে আগে হোটেলের কাজে তালিম নিয়েছেন তিনি। হাসপাতালের ওষুধে প্রকৃতিস্থ হয়ে তিনি বাড়ির ফোন নম্বর বলেন। তখন জানা যায়, তাঁর বাবা সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। মা চলে গিয়েছেন আগেই। ঠাকুরমা, দিদি, জামাইবাবু, ছোট তিন ভাই থাকলেও তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গতি নেই তাঁদের।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই আধিকারিক শুক্লা দাস বড়ুয়া ও অনিন্দিতা চক্রবর্তীর সঙ্গে ইম্ফলে ফেরেন ফিরোজা। ওই সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায় বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী রিভিউ বোর্ড বা মেন্টাল হেল্‌থ অথরিটি থাকলে আবাসিকদের ফেরানো সহজ হয়। তবে পাভলভের সুপারের সদিচ্ছায় এ ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে।” বাড়িতে পৌঁছে ফিরোজা ফোনে বললেন, “ভাইদের দেখতে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন