কালীপুজোর উদ্বোধনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং সোনালি গুহ (ডান দিকে)। মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিটের একটি পুজোয়। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে এখন তৃণমূলের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে বিজেপি। আগামী বিধানসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ ধরে ময়দানে নেমে পড়েছে তারা। বিশেষত, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ভোটে দলের সাফল্য তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় আসন্ন পুরভোটে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেই কাজেও আপাতত বড় ভরসা ‘যুবরাজ’!
দলে রদবদলের পরে মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে পুরভোট সংক্রান্ত আলোচনায় বসেছিলেন। আলোচনায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা যুব তৃণমূলের নতুন রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল সূত্রের খবর, কালীপুজোর পরেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি অভিষেকদের বৈঠক করতে বলেছেন। সেই বৈঠকে দলীয় কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ তো বটেই সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতাদেরও ডাকতে বলেছেন তিনি। তৃণমূল-পরিচালিত পুরসভার উন্নয়ন এবং বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করে প্রচারে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দলনেত্রী। নবান্নের আলোচনায় অভিষেকের পাশাপাশিই ছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সংগঠনে ভাইপোর ‘অভিষেকে’র পরে পুরভোটের লড়াইয়ে যুবরাজকেই যে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী, এই তৎপরতা থেকেই তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। সেই অর্থে আগামী পুরভোটই হতে চলেছে যুবরাজের প্রথম বড় পরীক্ষা।
কী ভাবে তাঁরা পুরভোটের মোকাবিলা করবেন, তার খুঁটিনাটি অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থবাবু এ দিন বলেছেন, “যা বলার, আমরা কালীপুজোর পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাব।” তবে দলীয় সূত্রের খবর, রদবদলের পরে শাখা সংগঠন এবং যুব ও ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন পদাধিকারীর নিয়োগ, কমিটি গঠন নিয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অভিষেক অবশ্য বলেন, “আমাদের কমিটি গঠন বা পদাধিকারী নিয়োগ, সবই হবে ভাইফোঁটার পরে।” এমনকী, বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, দলের সংসদ তহবিলের টাকা খরচের বিষয়েও এ দিন আলোচনা হয়। মুকুলবাবু বা সুব্রতবাবু অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
সারদা-কাণ্ডের পর থেকেই দলে মুকুলের গুরুত্ব খর্ব করার প্রক্রিয়া চলছে বলে দলের একাংশের অভিমত। আর সে দিক থেকে পুরভোটের প্রস্তুতিতে অভিষেককে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ, দলে ‘অ-মুকুলায়ন’ প্রক্রিয়া অব্যাহত। তবে দলেরই একাংশের ব্যাখ্যা ভিন্ন। শীর্ষ নেতাদের কারও কারও মতে, মুকুল, পার্থ, বক্সীর মতো প্রবীণের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী অভিষেকের মতো নবীনদের মেলবন্ধন ঘটিয়ে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলতে চাইছেন। দলের এক নেতার কথায়, “লোকসভা ভোটে নবীন ভোটারদের অনেকেই যেমন মোদীর টানে বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে, তাদের আকর্ষণ করতে অভিষেকের মতো যুব নেতা অগ্রণী ভূমিকা নিক, এটাই দলনেত্রী চান।” যার অর্থ, পুর-যুদ্ধে মমতার অন্যতম প্রধান ‘যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে চলেছেন অভিষেক।
তৃণমূল ভবনে গত শুক্রবার দলীয় বৈঠকেই অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল ‘যুবা’র অবলুপ্তি ঘটিয়ে দলের যুব সংগঠনের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন মমতা। নতুন যুব সংগঠনের দায়িত্বে এখন অভিষেই। তৃণমূল নেত্রী এখন চাইছেন, ‘যুব’-রাজকে সঙ্গে নিয়ে জেলায় জেলায় তাঁকে সংগঠনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। আগামী ৫ নভেম্বর থেকে তৃণমূল নেত্রী দলীয় বৈঠক করতে যে জেলা-সফর শুরু করছেন, অভিষেকও তাতে পিসির সঙ্গে থাকবেন। তবে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতির পদই দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জেলা-বৈঠকে থাকার সুযোগ এনে দিয়েছে অভিষেককে। যে সুযোগ করে দিয়েছেন মমতা নিজেই!