গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) ঘিরে বিতর্কের আবহে গত ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে। সোমবার বিরোধী দলগুলির প্রায় ২০০ সাংসদ নির্বাচন কমিশন অভিযানে গিয়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে গরহাজির রইলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক রয়েছেন কলকাতায়। তিনি দলীয় সাংগঠনিক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। আর কল্যাণ এসআইআর নিয়েই মামলার শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। গত সোমবার সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে অসুস্থ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় অভিষেককে লোকসভার দলনেতার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। ওই বৈঠকের পরেই লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন কল্যাণ। মঙ্গলবারই তা গৃহীত হয়। তার পর কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মুখ্যসচেতক এবং শতাব্দী রায়কে লোকসভার সংসদীয় দলের উপদলনেতা ঘোষণা করে তৃণমূল।
সোমবারের কর্মসূচিতে হাজির না-থাকা প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, ‘‘দিদি জানেন, পুরোটা জানেন। এসআইআর নিয়ে পার্টি যে মামলা করেছে, সেই কাজেই আমি সুপ্রিম কোর্টে ব্যস্ত ছিলাম।’’ আর অভিষেক ক্যামাক স্ট্রিটে নিজের দফতরে দলের উত্তর দিনাজপুর এবং বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রত বক্সীও।
লোকসভার দলনেতা হওয়ার পরে অভিষেকের সামনে এটাই ছিল দিল্লিতে রাস্তায় নামার প্রথম কর্মসূচি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, কর্মসূচির দিন পরিবর্তনের জন্যই অভিষেক থাকতে পারেননি। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ৮ অগস্ট হবে কমিশন অভিযান। সেই সময়ে অভিষেক দিল্লিতেই ছিলেন। কিন্তু পরে তা পরিবর্তিত হয়ে ১১ তারিখ চূড়ান্ত হয়। অন্য দিকে উত্তর দিনাজপুর এবং বহরমপুরের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক আগে থেকেই ঠিক ছিল। ফলে তা বদল করা যায়নি।
দলের মুখ্যসচেতক পদ ছাড়ার পরে মমতা সম্পর্কেই নানাবিধ মন্তব্য করেছিলেন কল্যাণ। দলের সর্বময় নেত্রী সম্পর্কে অতীতে প্রবীণ নেতার প্রকাশ্য সমালোচনা শোনা যায়নি। পরে যদিও ‘অনুতপ্ত’ কল্যাণ জানিয়েছেন, তাঁর ওই সমস্ত কথা বলা উচিত হয়নি। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছিল এই পর্বে। তবে গত শনিবার কল্যাণ বলেন, “মহুয়া মৈত্র আমার বিষয় (সাবজেক্ট ম্যাটার) নয়। অনেক সময়, শক্তি এক জন মহিলার জন্য নষ্ট করেছি। তার জন্য অনেকের কাছে খারাপ হয়েছি। দিদিকেও উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছি। এটা না-বললেই বোধহয় ভাল হত।”
অভিষেক, কল্যাণ না-থাকলেও তৃণমূলের সাংসদেরা সামনের সারিতেই ছিলেন বিরোধী শিবিরের সোমবারের কর্মসূচিতে। কমিশন দফতর পর্যন্ত সাংসদদের মিছিল আটকায় দিল্লি পুলিশ। সেখানে ব্যারিকেডের উপর উঠে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মহুয়া মৈত্র, সাগরিকা ঘোষ, মিতালি বাগের মতো তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা। মহুয়া, মিতালিরা অসুস্থও হয়ে পড়েন। বিক্ষোভকারী সাংসদদের আটকও করে পুলিশ।