Mamata Bandyopadhyay

অভিষেক-মুকুলের মধ্যে কখনওই মতবিরোধ ছিল না, সাফ জানিয়ে দিলেন নেত্রী মমতা

আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিষেকের হাত থেকেই উত্তরীয় পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুল। শুধু তা-ই নয়, মুকুল এবং অভিষেক পরস্পরকে আলিঙ্গনও করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ১৯:২০
Share:

মুকুল রায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়ের কখনওই কোনও মতবিরোধ ছিল না। শুক্রবার ‘ঘরের ছেলে ঘরে’ ফিরে আসতেই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় বিজেপি-তে কাটিয়ে ফের পুরনো দলে মুকুলের প্রত্যাবর্তন নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক মহলের কৌতুহল তুঙ্গে। অনেকেই জানতে চাইছেন, অভিষেকের সঙ্গে মুকুলের সম্পর্কের সমীকরণ কী হবে।

Advertisement

তৃণমূলশ্রতি— অভিষেকের সঙ্গে অবনিবনার কারণেই দল ছেড়েছিলেন মুকুল। স্বভাবতই মুকুলকে শুক্রবার অভিষেককে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। মুকুল বলতে শুরু করেন, ‘‘অভিষেকের সঙ্গে আমার কোনও মতবিরোধ ছিল না।’’ কিন্তু তিনি তাঁর জবাব শেষ করার আগেই সামনে-রাখা মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে স্বয়ং মমতা বলেন, ‘‘অভিষেকের সঙ্গে কখনওই মুকুলের মতবিরোধ ছিল না। কারও সঙ্গেই ছিল না।’’

ঘটনাচক্রে, তৃণমূল ছেড়ে যাওয়ার আগে মুকুল যে সর্বভারতীয় সাদারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, এখন সেই দায়িত্বে রয়েছেন অভিষেক। ফলে মুকুলকে কোন পদ দেওয়া হতে পারে, তা নিয়ে তৃণমূলে শুক্রবার থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, মুকুলকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হতে পারে। কারণ, মুকুলের যওগদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করার সময় মমতা বাক্য শুরুই করেছেন এই বলে যে, ‘‘বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় তৃণমূল যোগ দিচ্ছেন।’’ অর্থাৎ, বিজেপি-র জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষনেতা আস্থা রাখছেন তৃণমূলে। সেই সূত্রেই অনেকে মনে করছেন, মুকুলকে জাতীয় পর্যায়েরই সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। অনেকে মনে করছেন, মুকুলকে এর পর ত্রিপুরার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কারণ, এর আগেও মুকুল ত্রিপুরায় তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে অভিষেকের কোনও সমস্যাও হবে না। তবে অনেকেরই মতে। এ সবই জল্পনা এবং অতি সরলীকরণ।

Advertisement

বস্তুত, শুক্রবার প্রত্যাবর্তনের সময় তৃণমূল ভবনে পাশাপাশিই বসেছিলেন অভিষেক-মুকুল। অভিষেকই তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। দু’জনে আলিঙ্গনও করেন। মুকুলের পুত্র শ্রুভ্রাংশু রায়কেও উত্তরীয় পরিয়ে জড়িয়ে ধরেন অভিষেক। আনুষ্ঠানিক যোগদানের পর (সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে যোগদানকারীর হাতে তৃণমূলের প্রতীক সংবলিত পতাকা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মুকুল-শুভ্রাংশুর ক্ষেত্রে তেমন হয়নি) মাইক্রোফোন নিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিলেন মুকুল। সেই সময় মুকুলের হাত ধরে তাঁকে চেয়ারে বসেই বলার অনুরোধ করতে দেখা যায় অভিষেককে। মুকুলের মুখে একগাল হাসি। হাসিমুখেই তিনি বললেন, ‘‘এখানে এসে খুবই ভাল লাগছে। কারণ, দলের পুরনো ছেলেদের দেখতে পাচ্ছি। অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’’ দৃশ্যতই স্বস্তিতে থাকা মুকুলও এমনও বলেন, ‘‘বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে এসে সত্যিই ভাল লাগছে। বাংলা আবার নিজের জায়গায় ফিরবে। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি আমাদের নেত্রী, ভারতের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

তৃণমূল ভবনে মুকুলকে শুক্রবার জলে মাছের মতোই স্বচ্ছন্দ দেখিয়েছে। দৃশ্যতই তিনি অনেক স্বস্তিতে ছিলেন। মুখে চওড়া হাসি। আনুষ্ঠানিক ভাবে মুকুলের যোগদানের বিষয়টি ঘোষণা করার আগে প্রায় দেড়ঘন্টা দলের প্রথমসারির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। দুপুরের আগেই দলের শীর্ষনেতৃত্বকে তৃণমূল ভবনে আসতে বলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের অব্শ্য মুকুলের যোগদান সম্পর্কে পাকাপাকি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল, জরুরি বৈঠক আছে। তবে তৃণমূল ভবনে পৌঁছনোর পরেই তাঁরা জেনে যান, কেন জরুরি বৈঠক।

মুকুলকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, মমতা তা শুক্রবার খোলসা করেননি। তবে জানিয়েছেন, মুকুল আগের মতোই গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন। তবে আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য— মমতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মুকুল যোগ দেওয়ায় তৃণমূল কতটা শক্তিশালী হল। কালক্ষেপ না করে মমতা জবাব দেন, ‘‘তৃণমূল শক্তিশালী ছিলই। আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন