Abhishek on Delhi Election

দিল্লি ভোটে আপের হার নিয়ে মমতার সঙ্গে সহমত নন অভিষেক! কী ব্যাখ্যা দিলেন কেজরীর পতনের

বৃহস্পতিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের সাতগাছিয়ায় ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে দিল্লির ভোটের পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্যের বাজেট নিয়েও কথা বলেছেন তৃণমূল সাংসদ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:০১
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস জোট হলে ফলাফল অন্য রকম হতে পারত। বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দুই শরিকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেই রাজধানীতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকারের পতন হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মতামত দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর ওই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করলেন না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস জোট হলেও খুব একটা লাভ হত না। মেরেকেটে চার-পাঁচটি আসনে ফল অন্য রকম হত। এর বেশি কিছু নয়।

Advertisement

২৭ বছর পর দিল্লি বিধানসভায় ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। রাজধানীর ভোটে ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টিতে জিতেছে তারা। আপ ২২টিতে। কংগ্রেস খাতাই খুলতে পারেনি। গত শনিবার ভোটের ফল প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু না বললেও সোমবার বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে দিল্লি ভোট নিয়ে মমতার বক্তব্য ছিল, দিল্লি নির্বাচনে কয়েক শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে জিতেছে বিজেপি। কংগ্রেস ‘নমনীয়’ হয়ে আপের সঙ্গে জোট করলে এমনটা হত না। ওই বৈঠকেই হরিয়ানার ভোটের প্রসঙ্গও টেনেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর বক্তব্য ছিল, হরিয়ানায় আপ কংগ্রেসের সঙ্গে যা করেছে, দিল্লিতে কংগ্রেস তা-ই করেছে আপের সঙ্গে। কংগ্রেস-আপ পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে না-চলার ফলেই দুই রাজ্যে বিজেপি তার ফয়দা তুলেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন মমতা।

প্রসঙ্গত, দিল্লি ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করেও দেখা গিয়েছে, আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটির ফলে ১৪টি আসনে জিতে গিয়েছে বিজেপি। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, ভোটের পাটিগণিত এত সরলরেখায় সব সময় চলে না। আপ-কংগ্রেস জোট হলে বিজেপি কী কৌশল নিত, তা-ও দেখার ছিল।

Advertisement

অভিষেকের মতে, ‘‘দিল্লিতে আপ-কংগ্রেসের জোট হলেও খুব বেশি লাভ হত বলে আমার মনে হয় না। চার-পাঁচটা আসনে ফারাক অবশ্যই হতে পারত। আপনি একা লড়ুন বা কারও সঙ্গে জোট করে লড়ুন, দেখতে হবে, জনতা আপনার সঙ্গে আছে কি না। দিল্লির মানুষের মনে হয়েছিল, এ বার বদল দরকার। আর গণতন্ত্রে মানুষের মতামতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের আরও বক্তব্য, বিজেপি আপের বিরুদ্ধে যে প্রচার করেছিল, কেজরীওয়ালের দল তার পাল্টা ‘ভাষ্য’ তুলে ধরতে পারেনি মানুষের কাছে। সে কারণেই পরাজয়। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি মিথ্যা প্রচারে ওস্তাদ। কিন্তু আপ পাল্টা ভাষ্য (কাউন্টার ন্যারেটিভ) মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারেনি।’’

এ প্রসঙ্গে বাংলার উদাহরণও দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাতেও বিজেপি একই চেষ্টা করেছিল। ওরা বলেছিল, কেন্দ্র নাকি টাকা দিচ্ছে আর তৃণমূল সেই টাকা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না। আমরা পাল্টা প্রচার করে বলেছিলাম, যদি টাকা দিয়ে থাকে, তা হলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। ওরা করেনি।’’ পাশাপাশিই অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা ৫০ লক্ষ মানুষের থেকে সই সংগ্রহ করেছিলাম। তার পরে দিল্লিতে মানুষের পাওনা চেয়ে আন্দোলন নিয়ে গিয়েছিলাম।’’ উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি, আবাস যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে তৃণমূল যে দিল্লি অভিযান করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন অভিষেকই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত আগেই রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকে ৫৯ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দিয়েছিল। ভোটের ঠিক আগেই বিপুল সংখ্যক মানুষের অ্যাকাউন্টে একলপ্তে থোক টাকা পৌঁছে গিয়েছিল। তৃণমূলের প্রচারের ভাষ্য ছিল, ‘‘মোদী নিচ্ছে, দিদি দিচ্ছে।’’

দিল্লি বা হরিয়ানায় জোট না-হওয়া নিয়ে মমতা কংগ্রেস এবং আপকে দুষলেও পরিষদীয় বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে এবং দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে। অভিষেককে একা লড়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘দিদি তো বলেই দিয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলায় তো তৃণমূল একা লড়েই নির্বাচনে জেতে। ২০১৪ সাল থেকে যত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট হয়েছে, তৃণমূল এ রাজ্যে একা লড়েই জিতেছে।’’ অভিষেক জানিয়েছেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ তাঁরা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় রয়েছেন। কিন্তু রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতানৈক্য হলে তাঁরা একাই লড়বেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একাই লড়ি এবং জিতিও।’’

উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিষেক। সেই সময় থেকেই কংগ্রেস এবং তৃণমূলের জোট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। ভোটের অব্যবহিত আগে পর্যন্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা জয়রাম রমেশ বলতেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।’’ অন্য দিকে, বাংলায় অধীর চৌধুরীরা ছিলেন তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সে জোট হয়নি। তৃণমূল একাই লড়েছিল।

বৃহস্পতিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের সাতগাছিয়ায় ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বাজেট নিয়েও কথা বলেছেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘নির্মলা সীতারামন যে বাজেট পেশ করেছেন, সেটা বাংলা-বিরোধী বাজেট। সুপরিকল্পিত ভাবে বাংলার উন্নয়নযজ্ঞ রুখে দেওয়ার চেষ্টা। বাংলার বাজেট বাংলার মানুষের কথা ভেবে হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে এত টাকা বরাদ্দ হল! কারা বলছে এটা দিশাহীন বাজেট? কেন্দ্রের মতো বঞ্চনার বাজেট নয়। কেন্দ্র তো বিহারকে ভরে দিয়েছে বাজেটে। আর বাংলাকে শুধুই বঞ্চনা। ভোট দিলে লাড্ডু আর ভোট না দিলে বঞ্চনা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement