Abhishek Banerjee

অভিষেকের খাতায় ‘লাস্ট বয়’ ববি-বাবুল, বেচারাম-অসীমা এক নম্বরে, ৯ জন নেতাকে ব্যাগ গুছিয়ে জেলায় যাওয়ার নির্দেশ!

আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজে গতি আনতে জেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে বুধবার থেকেই ৯ জন নেতাকে জেলায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, সেই নেতাদের উদ্দেশে অভিষেক বলেছেন, ৯ দিনের জামাকাপড় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান। এ-ও বলে দিয়েছেন, পার্টি অফিসে বসে থাকলে হবে না। ওয়ার রুমে যেতে হবে। বিধানসভাগুলি চষে ফেলতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১৬
Share:

সোমবার দলের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরুর আগে দলের সর্ব স্তরের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রক্রিয়ার ২০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর সোমবার ২৫ হাজার নেতাকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করলেন অভিষেক। সেই বৈঠকে একাধিক জেলাকে কার্যত ভর্ৎসনা করলেন অভিষেক। আবার ‘সাবাশি’ পেল একাধিক জেলা। জেলা ধরে, বিধানসভার নাম উল্লেখ করে অভিষেক জানিয়ে দিলেন, কারা এগিয়ে, কারা পিছিয়ে। আরও যে ১০ দিন এসআইআরের প্রথম পর্বের কাজ বাকি রয়েছে, তাতে গতি আনতে জেলায় ৯ জন নেতাকে বুধবার পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিযেক।

Advertisement

প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক হয় সোমবার। গোড়াতেই তালিকা পাঠ করে অভিষেক জানিয়ে দেন, বুথ স্তরের এজেন্ট (বিএলএ) সক্রিয়তার নিরিখে, কোন কোন বিধানসভা সবচেয়ে পিছিয়ে এবং কারা সব থেকে এগিয়ে রয়েছেন। এসআইআর শুরুর আগে অভিষেক দলীয় বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কমিশন নিযুক্ত বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দের সঙ্গে দলের বিএলএদের ছায়াসঙ্গীর মতো লেগে থাকতে হবে। দৈনিক কাজের তথ্য-পরিসংখ্যান ‘দিদির দূত’ অ্যাপে নথিভুক্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০ দিন গড়ানোর পরে দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গাতেই আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। কোথাও কোথাও আবার আশাতীত ভাল কাজ হয়েছে। অভিষেকের খাতা অনুযায়ী বিএলএ সক্রিয়তা এবং এনুমারেশন ফর্ম জমা পড়ার নিরিখে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আটটি বিধানসভা। সেই তালিকায় রয়েছে বালিগঞ্জ, বনগাঁ দক্ষিণ, বেলেঘাটা, এন্টালি, মধ্যমগ্রাম, কলকাতা বন্দর, কাশীপুর-বেলগাছিয়া এবং চৌরঙ্গি।

ঘটনাচক্রে, পিছিয়ে থাকা আটটির মধ্যে ছ’টি বিধানসভাই কলকাতার। তিনটি বিধানসভা আবার তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর। বালিগঞ্জের বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম (ববি) এবং মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ। এঁদের মধ্যে ববি শুধু মন্ত্রী নন, কলকাতার মেয়রও বটে। মেয়রের পাশাপাশি কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের বিধানসভা কাশীপুর-বেলগাছিয়াও রয়েছে পিছিয়ে থাকার তালিকায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক তথ্য দিয়ে বৈঠকে জানিয়েছেন, বালিগঞ্জে ৩৪ শতাংশ, বনগাঁ দক্ষিণে ৩৩ শতাংশ, বেলেঘাটায় ৩১ শতাংশ, এন্টালিতে ৩০ শতাংশ, মধ্যমগ্রামে ২৯ শতাংশ, কলকাতা বন্দরে ২২ শতাংশ, কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় ২৪ শতাংশ এবং চৌরঙ্গিতে ২৮ শতাংশ বিএলএ সক্রিয়।

Advertisement

আবার এগিয়ে থাকা বিধানসভাগুলির মধ্যে সবার উপরে রয়েছে হুগলির দুই বিধানসভা ধনেখালি এবং হরিপাল। অসীমা পাত্রের ধনেখালি এবং বেচারাম মান্নার হরিপালে ১০০ শতাংশ বিএলএ সক্রিয়। এর পরেই রয়েছে বেচারামের স্ত্রী করবী মান্নার বিধানসভা সিঙ্গুর। এগিয়ে থাকার তালিকায় রয়েছে বাকি বিধানসভাগুলি হল— উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, হুগলির তারকেশ্বর।

এই এগিয়ে-পিছিয়ে থাকার ভিত্তি কী, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের খবর তিনি জানিয়েছেন, অনেক জায়গায় হয়তো বিএলএ বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, কিন্তু ‘দিদির দূত’ অ্যাপে আপডেট করছেন না। ফলে দলের কাছে তথ্য আসছে না। নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ তৈরির জন্য সমান্তরলার ব্যবস্থা হিসাবে ‘দিদির দূত’কে ব্যবহার করতে চাইছেন অভিষেক। সূত্রের খবর তিনি বলেছেন, ওরা ভোট চুরি করতে নেমেছে। আমরা সেই চুরি ধরব। সেই কারণেই এটা করতে হবে। যদি কোনও বিএলএ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সড়গড় না-হন, তা হলে অন্য কাউকে এই কাজ করে দিতে হবে। কিন্তু তথ্য জানাতেই হবে।

আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কাজে গতি আনতে জেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে বুধবার থেকেই ৯ জন নেতাকে জেলায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, সেই নেতাদের উদ্দেশে অভিষেক বলেছেন, ৯ দিনের জামাকাপড় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান। এ-ও বলে দিয়েছেন, পার্টি অফিসে বসে থাকলে হবে না। ওয়ার রুমে যেতে হবে। বিধানসভাগুলি চষে ফেলতে হবে। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দেখবেন হুগলি ও দুই বর্ধমান, পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দায়িত্ব কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া যাবেন বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায়, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দায়িত্ব পশ্চিম মেদিনীপুর, রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকে পাঠানো হচ্ছে উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহে, প্রাক্তন আইপিএস তথা গত লোকসভায় মালদহ উত্তর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেতে বলা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানে, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল যাবেন কোচবিহারে, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে দেওয়া হয়েছে ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব, রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন মুর্শিদাবাদ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দলাদলি নয় গলাগলির দিন

২৫ হাজার নেতার বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এখন দলের মধ্যে দলাদলি করার সময় নয়। কোন্দল সরিয়ে গলায় গলা মিলিয়ে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। একাধিক জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল সর্বজনবিদিত। তার মধ্যে অন্যতম বীরভূম। যেখানে যুযুধান দুই নেতা অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখ। সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকে বীরভূমের নেতাদের বলতে গিয়ে অভিষেক বলেছেন, তিনি দু’পক্ষকেই এই নির্দেশ দিচ্ছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অভিষেক বলেছেন, এক বাড়িতে থাকলে অনেক সময়ে মনোমালিন্য, খটাখটি হয়। কিন্তু বাড়িটাই না-থাকলে কোথায় যাবেন?

যুদ্ধ ভেবে কাজ করুন

সাধারণ ভাবে অবামপন্থী দল তেতে ওঠে ভোটের আগে। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে তিনি দলকে সারা বছরের সংগঠনের ছাঁচে ফেলতে চেয়ে কাজকর্ম পরিচালনা করেছেন। এসআইআর পর্বেও সেই সংগঠনকেই সর্বাত্মক ভাবে মাঠে নামাতে চাইছেন তিনি। সোমবারের বৈঠকে অভিষেক বার্তা দিয়েছেন, এ বার তিন মাসের নির্বাচন নয়। ভোট এ বার ছ’মাসের লড়াই। তার মধ্যে এক মাস হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৫০ দিন মাঠে থেকে কাজ করতে হবে। এ-ও বার্তা দিয়েছেন, এই ১৫০ দিন আগামী ২০ বছরের ভিত গড়ে দেবে। ১০০ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম যাতে জমা পড়ে, তার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। এটাই যে আগামী দিনে দলীয় পদে থাকার সূচক, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

সাংসদদের দায়িত্ব

১০ জন সাংসদের নামোল্লেখ করে অভিষেক দায়িত্ব দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে হবে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে গত ২০ দিনে যে যে অভিযোগ তৃণমূল জানিয়েছে, তা নিয়ে কমিশনের পদক্ষেপ নেই কেন, তার জবাব চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই, যে বিএলওরা কমিশনকে দায়ী করে আত্মঘাতী হয়েছেন, তাঁদের সুইসাইড নোটও অভিষেক নিয়ে যেতে বলেছেন দিল্লিতে। কমিশনের কাছে তৃণমূলের তরফে যাবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, শতাব্দী রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, প্রকাশচিক বরাইক, শাজদা আহমেদ, মমতাবালা ঠাকুর এবং সাকেত গোখলে।

কলকাতায় বিশেষ নজর

উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিধানসভাগুলিতে এসআইআর সংক্রান্ত সাংগঠনিক কাজ নিয়ে সোমবারের বৈঠকে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, অভিষেক বলেছেন, এটা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকার সময় নয়। সোমবার কলকাতার অবস্থা নিয়ে ববি এবং অরূপের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথাও বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিধায়ক, কাউন্সিলর, নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক।

দিদি কিন্তু দেখছেন

অভিষেক দলের সর্ব স্তরের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ দিন অন্তর তাঁর কাছ থেকে রিপোর্ট চাইছেন। তিনি সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। ইতিমধ্যেই এক দফা রিপোর্ট অভিষেক পাঠিয়েছেন। ফের রিপোর্ট দেবেন ৬ ডিসেম্বর। সোমবারের বৈঠকে একাধিক নেতার নাম করে অভিষেক বলেছেন, তাঁরা এসআইআর প্রক্রিয়ায় সক্রিয় নন। সেই তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী মলয় এবং মনোজ তিওয়ারি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement