ক্ষোভটা অনেক দিনের। তাতে আগুন লাগাল বৃদ্ধের মৃত্যু।
কয়েক বছর ধরেই শিয়ালদহ মেন লাইনে সময় মতো ট্রেন চলছে না। রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থা, সবেতেই গোলমাল থাকায় ট্রেন চলছে অনিয়মিত। এর সঙ্গে রয়েছে চালক ও গার্ডের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও। কার্যত গোটা ডিভিশনটাই চলছে জোড়াতাপ্পি দিয়ে। বৃহস্পতিবার সোদপুরের যাত্রী-বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা তারই জের বলে মনে করছেন রেলের কর্তাদের একাংশ।
বৃহস্পতিবার সোদপুরে বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনার পরে যাত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন, প্ল্যাটফর্মে গ্যালপিং ট্রেন আসছে বলে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে রেলের জনসংযোগ দফতরের কর্তারা জানান, সময় মতোই ঘোষণা হয়েছে। কোনটা ঠিক, তদন্তের পরেই তা জানা যাবে। কিন্তু ট্রেনের ঘোষণা যে ঠিক মতো করা হচ্ছে না, তা স্পষ্ট রেল কর্তাদের একাংশের কথাতেই।
স্টেশনে এত দিন ঘোষণা করতেন স্টেশন মাস্টার। কখনও মাইকে, কখনও বা কম্পিউটারের মাধ্যমে। কিন্তু শিয়ালদহ থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হয়ে যাওয়ার পরে বেশির ভাগ স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কাজ না থাকায় পদগুলি তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ঘোষণা ব্যবস্থাটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু হলে স্টেশন মাস্টারের আর প্রয়োজন থাকে না এ কথা ঠিক। কিন্তু ঘোষণা করার জন্য স্টেশনে এক জন করে ঘোষকের পদ (গ্রুপ-সি) রাখার কথা। শিয়ালদহ মেন লাইনে বেশির ভাগ স্টেশনে গ্রুপ-ডি পদ মর্যাদার এক জন করে পোর্টার বা মোটবাহককে দিয়ে ওই কাজ করানো হচ্ছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। রেলকর্তাদের ওই অংশ বলছেন, খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা। হাওড়া-খড়্গপুর শাখাও পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার অধীন। কিন্তু সেখানে স্টেশনগুলিতে আলাদা করে ঘোষকের পদ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সোদপুর স্টেশনের যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি সোদপুর উড়ালপুলের ঠিক নীচে। সেখানে রেল একটি আন্ডারপাসও তৈরি করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে তার কাজ। সেখানেই আবার লাইনের দু’পাশ ধরে জবরদখল করে রয়েছে বাজার। এক কথায় প্রচণ্ড ঘিঞ্জি ওই এলাকা। সেখানে লাইন পারপার মানে হাতে প্রাণ নিয়ে যাতায়াত।
তবে শুধু ঘোষক সমস্যা নয়, ঘোষণার যন্ত্রাপাতিও এত খারাপ মানের যে, তা দিয়ে কোনও কথাই স্পষ্ট বোঝা যায় না। ফলে ঘোষণা হলেও বেশির ভাগ সময়েই যাত্রীরা তা বুঝতে পারেন না। এ ছাড়া, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে যে দু’টি বা একটি করে মাইক থাকে, এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত তার শব্দ পৌঁছনোও অসম্ভব। তার মধ্যে ১২ কামরা ট্রেনের জন্য এখন অনেক প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে। ফলে শেষ প্রান্তে থাকলে ঘোষণার শব্দ কানে আসারও কথা নয়।
যাত্রীদের বক্তব্য, আন্ডারপাস তৈরির জন্য রেল লাইনের দু’পারেই টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু মানুষের যাতায়াতের জন্য দু’এক জায়গায় কাটাও রয়েছে। যাত্রীরা বলছেন, বিপত্তি সেখানেই। ওই কাটা অংশ একদম বন্ধ করে দিলে সকলেই বাধ্য হবেন প্ল্যাটফর্মের ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে। কিন্তু এখন ওই বেড়ার ফাঁক গলেই প্রাণ হাতে নিয়ে বাজার করেন মানুষ। কেন ওই কাটা অংশ বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি কেউ। তেমনই ওই আন্ডারপাসের কাজ আর কতদিন চলবে, তা-ও বলতে পারেননি রেল কর্তারা।
এ সবের উপরে আর এক সমস্যা অনিয়মিত ট্রেন চলাচল। ফলে এটা স্পষ্ট যে দুর্ঘটনা নয়, দীর্ঘদিন পরিষেবা না পাওয়ার ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন যাত্রীরা।