অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে কৃষ্ণেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।
আততায়ী পেটে ছুরি বসালে কী হয়!
দশম শ্রেণির ছাত্রটির সেটাই অভিনয় করে দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সেই অভিনয়ই ফাঁড়া হয়ে এল তার জীবনে।
জামার ভিতরে পেটে বাঁধা থার্মোকল। তাতে উপর থেকে ছুরি গাঁথা। আচমকা তার পা পিছলে গেল। ছুরি গেঁথে গেল পেটে। বেরিয়ে এল রক্ত। আর্তনাদ করে উঠল ছাত্রটি। হাততালি দিলেন সবাই। দিদি চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘দারুণ, দারুণ! পুরস্কার তোর বাঁধা!’’
ছেলেটি তখন চিৎকার করছে, ‘‘আমার পুরস্কার চাই না। দিদি, পেটে সত্যি ছুরি গেঁথে গিয়েছে। আমাকে বাঁচা।’’
কিছু ক্ষণের মধ্যে সকলের হুঁশ ফিরল। ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় খুন হওয়া বালকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদয়নারায়ণপুরের হরিশপুরের কৃষ্ণেন্দু সামুই নামে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়। নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে ছুরি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় পাকস্থলী। প্রথমে তাকে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আলমপুরের একটি নার্সিংহোমে। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার ক্ষত মেরামত করা হয়। ছেলেটি এখন বিপন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, এটি নিছকই দুর্ঘটনা।
নার্সিংহোমের কর্তব্যরত শল্য চিকিৎসক সুদীপ্ত মল্লিক বলেন, ‘‘নাড়িভুঁড়ি ক্ষতবিক্ষত হয়ে বেরিয়ে আসা ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু পাকস্থলী যে ভাবে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল, তা আগে দেখিনি। অস্ত্রোপচারে দেরি হলে বিপদ হত। এখন আর বড় বিপদ নেই।’’
গোটা ঘটনায় নিজের কপালকেই দুষছেন কৃষ্ণেন্দুর বাবা সুনীলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে ওই প্রতিযোগিতায় বেশ দক্ষ। অনেক জায়গায় অংশগ্রহণ করে ও পুরস্কার পেয়েছে। এ বার যে এমন দুর্ঘটনা হবে, কে জানত! সবই কপাল!’’ আর শুক্রবার নার্সিংহোমে কৃষ্ণেন্দু বলে, ‘‘বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতেই সত্যিকারের ছুরি নিয়েছিলাম। আচমকা পা পিছলে যে পড়ে যাব, বুঝতে পারিনি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজো উপলক্ষে প্রতি বছরই হরিশপুরে নানা প্রতিযোগিতা হয়। এ বারও তার আয়োজন হয়েছিল। তাতেই ছিল ‘যেমন খুশি সাজো’। থার্মোকলে ছুরি বেঁধা অবস্থায় পা পিছলে যাওয়ার সময়ে কৃষ্ণেন্দু মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে। তাতেই ছুরিটি নাভির ডান দিক দিয়ে পেটে ঢুকে যায়। গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকায় সকলে থার্মোকল সরিয়ে দেখেন, আমূল ঢুকে গিয়েছে ছুরিটি। গ্রামবাসীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সুনীলবাবু জরির কাজ করেন। ছেলের দুর্ঘটনার সময়ে তিনি কাজে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে ফিরে আসেন।
সুনীলবাবু বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখতে পাই, ও ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। তড়িঘড়ি কলকাতায় না-গিয়ে ওকে আলমপুরে নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। বড় বিপদ কাটল।’’
স্থানীয় বাসিন্দা ভোলানাথ সামুই বলেন, ‘‘সত্যিকারের ছুরি বা অন্য কোনও অস্ত্র যাতে যেমন খুশি সাজো-তে ব্যবহার করা না-হয়, ভবিষ্যতে সে বিষয়ে সতর্ক থাকব।’’