জানলা দিয়ে অ্যাসিড ঘুমন্ত যুবককে, ধৃত

গ্রামের শীতলা পুজোয় মাইক বাজিয়ে নাচানাচি নিয়ে অশান্তি বেধেছিল দু’দল যুবকের মধ্যে। অশান্তি মিটেও গিয়েছিল। কিন্তু তার জেরেই গভীর রাতে ঘুমন্ত এক যুবকের গায়ে জানলা দিয়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

তদন্ত: ঘটনাস্থলের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের শীতলা পুজোয় মাইক বাজিয়ে নাচানাচি নিয়ে অশান্তি বেধেছিল দু’দল যুবকের মধ্যে। অশান্তি মিটেও গিয়েছিল। কিন্তু তার জেরেই গভীর রাতে ঘুমন্ত এক যুবকের গায়ে জানলা দিয়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার কুশমান গ্রামে। অ্যাসিডে জখম বছর চব্বিশের শান্তিনাথ কাবড়িকে প্রথমে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এসএসকেএমে। ঘটনায় অভিযুক্ত পড়শি যুবক সুনীল পোড়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘাটাল মহকুমায় অ্যাসিড হামলার ঘটনা নতুন নয়। কখনও প্রেমের সম্পর্কে নারাজ তরুণীর গা ঝলসে গিয়েছে অ্যাসিডে, কখনও আবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে অ্যাসিড হানার শিকার হয়েছেন মহিলা। সালিশি নিয়ে গোলমালে দাসপুরের অ্যাসিড কাণ্ডে সাত অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু তাতেও অ্যাসিড হামলায় দাঁড়ি পড়েনি। আর প্রতিটি ঘটনাতেই খোলা বাজারে অ্যাসিডের সহজলভ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কুশমান গ্রামের ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ধৃতকে জেরা করে ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা চলছে। কোত্থেকে অ্যাসিড পেল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কী ধরনের অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Advertisement

কুশমান গ্রামে শীতলা পুজো হয়েছে মঙ্গলবার। বুধবারও গভীর রাত পযর্ন্ত মাইক-বক্স বাজিয়ে নাচানাচি চলছিল। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ নাচানাচিকে কেন্দ্র করেই গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা পেশায় সোনার কারিগর শান্তিনাথের সঙ্গে বচসা বাধে উত্তর পাড়ার যুবক সমীর ও তাঁর ভাই সুনীল পোড়ের। দু’পক্ষের হাতাহাতি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অশান্তি থেমে যায়। শান্তিনাথ বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়েও পড়েন। তারপর রাত একটা নাগাদ জানলা দিয়ে তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

শান্তিনাথের মা শ্রীমা কাবড়ি বলছিলেন, “ছেলের বিছানা জানলার ধারেই। ওর চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি, ছটফট করছে। ঝলসে গিয়েছে মুখের একাংশ।” শান্তিনাথের বাবা দুলর্ভবাবু বারান্দায় শুয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘টর্চ জ্বালতেই দেখি দু’জন ছুটে পালাচ্ছে। সমীরকে চিনে ফেলি।”

মুম্বইয়ে সোনার কাজ করেন শান্তিনাথ। শীতলাপুজোয় গ্রামে ফিরেছিলেন। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য তাতাই মণ্ডল বলছিলেন, “নাচানাচি নিয়ে শান্তিনাথ আর সমীরদের গণ্ডগোল হচ্ছিল বলে শুনেছিলাম। তা থেমেও যায়। তাই আমল দিইনি। পরে শুনি এই কাণ্ড।’’

ঘটনায় অভিযুক্ত সমীর ও তাঁর দাদা সুনীল আগে ছাতা বিক্রি করতেন। এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ফলে, তাঁরা কী করে অ্যাসিড পেলেন তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ থেকে গ্রামবাসী। একই সঙ্গে একাংশ গ্রামবাসীর অভিযোগ, অ্যাসিড বিক্রি, মজুত ও ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও নজরদারির অভাবে তা মানা হয় না। ফলে, খোলাবাজারে চাইলেই মেলে অ্যাসিড। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধানের অবশ্য দাবি, “সরকারি নিয়ম মেনে অ্যাসিড বিক্রির জন্য ধারাবাহিক অভিযান চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন