ভাঙন ঠেকাতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে অধীর

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের ভাঙন রোধে মঙ্গলবার বহরমপুরে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু সেই সভায় অনুপস্থিত থেকে দলের ভাঙন-আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসেরই তিন বিধায়ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

বহরমপুরের বৈঠকে অধীর চৌধুরী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের ভাঙন রোধে মঙ্গলবার বহরমপুরে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু সেই সভায় অনুপস্থিত থেকে দলের ভাঙন-আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসেরই তিন বিধায়ক। শুধু তাই নয়, দলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে উল্টে উপদেশও শুনতে হল অধীরবাবুকে— ‘‘দাদা কান দিয়ে দেখা বন্ধ করুন, চোখ দিয়েই দেখুন।’’

Advertisement

বাম জমানায় ভাগীরথীর ভাঙন রুখতে গিয়ে একদা মুর্শিদাবাদে দীর্ঘ পদযাত্রা করেছিলেন অধীরবাবু। তাতে জেলায় তাঁর জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছিল, তেমনই শক্তিশালী হয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এ বারের চ্যালেঞ্জ যে শতগুণ বেশি তা ভালই টের পাচ্ছেন জেলার এই প্রভাবশালী নেতা। বিধানসভা ভোটের পর জেলায় বাম-কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে এনে এরই মধ্যে তিনটি পুরসভার দখল নিয়েছে তৃণমূল। জেলা পরিষদে কংগ্রেসের দশ সদস্যকেও ভাঙিয়ে নিয়েছে শাসক দল। ফলে জেলা পরিষদও কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

সংকট বাড়ার কারণেই এ দিন জেলার সব কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকেছিলেন অধীরবাবু। কিন্তু বৈঠকে উল্লেখযোগ্য ভাবেই অনুপস্থিত ছিলেন রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক রবিউল আলম। ফরাক্কা ও রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক এবং আখরুজ্জামানও অনুপস্থিত ছিলেন সেখানে। সূত্রের খবর, বৈঠকে রেজিনগরের বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বেলডাঙা-২ (পূর্ব) ব্লকের সভাপতি অসিত সিংহ বলেন, ‘‘রবিউল তৃণমূলের দিকে পা-বাড়িয়ে রেখেছেন বলে এলাকায় চর্চা চলছে।’’ অসিতবাবু আরও জানান, ‘‘ওঁকে বলা হয়েছিল, আপনি সভা করে বলুন এসব বাজে জল্পনা। কিন্তু তা করতেও উনি রাজি হননি।’’

Advertisement

যদিও জেলা কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে তিন বিধায়কই ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে বৈঠকে থাকতে পারেননি। কিন্তু প্রকাশ্যে তা বললেও ভিতরে ভিতরে সন্দেহ বাড়ছে। বস্তুত মুর্শিদাবাদের জেলা কংগ্রেসে এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অবিশ্বাসের সুর। তিন সপ্তাহ আগে প্রধান ভরত ঝাওয়ার নামে বেলডাঙার যে পুরপ্রধান কলকাতার বিধান ভবনে গিয়ে অধীরবাবুর সঙ্গে দেখা করে ‘বিশ্বস্ততার’ পরিচয় দিয়েছিলেন, তার দশ দিনের মধ্যে সেই তিনিই তৃণমূল ভবনে গিয়ে শাসক দলে নাম লেখান! জেলা পরিষদের যে সদস্য আগের দিন ফোন করে ‘দাদা’-র কাছে পরামর্শ নিয়েছেন, পরদিন তাঁকে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের পতাকা হাতে।

এমন অবিশ্বাসের পরিবেশে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের দুর্গের ভিত কেবল নড়েনি, অধীরবাবুর ‘রবিনহু়ড’ ভাবমূর্তিতেও ধাক্কা লেগেছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন বৈঠক ডাকলে তাঁকেই দলের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যেমন ভগীরথপুর অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি মাফিকুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেক সময়ে দলের স্বার্থে জনপ্রতিনিধিদের কোনও প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি নিজের স্বার্থে তা খারিজ করে দেন। জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ওই জনপ্রতিনিধির সম্পর্ক ভাল থাকার সুবাদে আমাদের কথা গুরুত্ব দেন না।’’ এর পরেই অধীরবাবুকে তিনি কান দিয়ে না দেখার পরামর্শ দেন। বৈঠকে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, বিধানসভা ভোটের পর জেলা কংগ্রেসে ঘোর বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কার সঙ্গে? সিপিএম না তৃণমূল? কারণ, সিপিএমের বিরোধিতা করেই জেলায় কংগ্রেসের শক্তি বেড়েছে। অথচ বামেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে জেলার কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দল ভাঙার সেটাও বড় কারণ।

এ দিনের বৈঠকে জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, জেলার ১১ জন কংগ্রেস বিধায়ক, অঞ্চল, ব্লক ও মহকুমা সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার-সহ ২৫ জন জেলা পরিষদ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। ভাঙন ঠেকাতে অধীরবাবু সকলের মতামত চান। সেই সঙ্গে বলেন,‘‘রাজনীতির চোরাশিকারি জেলায় ঢুকেছে। আপনাদের সবার মত নিয়ে তা ঠেকাতে যা যা করার সব করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন