বিক্ষোভের নামে সার্কাস, ফের চড়া সুর অধীরদের

দলের কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বুঝতে পেরে সি পি জোশী চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে তাল মেলালেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

রেল অবরোধ। বৃহস্পতিবার কড়েয়া কদম্বগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

দলের কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বুঝতে পেরে সি পি জোশী চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে তাল মেলালেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও।

Advertisement

দু’জনেরই স্পষ্ট কথা— তাঁরা তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি সমর্থন করছেন। দু’জনেরই দাবি, আরও যে সব প্রভাবশালী নেতা আছেন, তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে। এক ধাপ এগিয়ে অধীরবাবু জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রতিহিংসার তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। কারণ, মান্নানের করা মামলার ভিত্তিতেই তাপস-সুদীপকে ধরেছে সিবিআই।

সুদীপবাবু গ্রেফতারের পরে দিল্লিতে এআইসিসি-র মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেছিলেন, ‘‘বিরোধীদের জব্দ করতে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদী সরকার।’’ পরে বুধবার দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সি পি জোশীর পাশে বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছিলেন, কংগ্রেস দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু সুদীপবাবুকে যে সময়ে গ্রেফতার করা হল তা নিয়ে একটা সন্দেহও থাকছে। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে সংসদে বিরোধী ঐক্য ভাঙতেই সুদীপবাবুকে ‘এই সময়ে’ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। শোনার পরে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। দলের মধ্যে ভুল বার্তা গিয়েছে বুঝতে পেরে অধীরবাবুও তৃণমূলের বিরোধিতায় এ দিন ফের আক্রমণাত্মক হন। দিল্লিতে যে ভাবে তৃণমূল সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সামনে এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার নিন্দা করেন তিনি।

Advertisement

সাংসদদের বিক্ষোভের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘উনি নিজে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হয়ে কী করে ভুলে যাচ্ছেন, ওটা কেবল মোদীর দফতর নয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ওখানে এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানো যায় না।’’ নবান্ন ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে বিরোধী দলকে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হয় না— এ কথা মনে করিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দলের বিধায়করা চিঠি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন না। আসলে সার্কাস পার্টির জোকারের চরিত্ররা যা করে, সুদীপবাবু গ্রেফতারের পরে তৃণমূলের সাংসদরা তা-ই করছেন। সারদা, রোজ ভ্যালিতে গচ্ছিত গরিবের টাকা যারা লুঠ করেছে, তাদের সাজা দিতে হবে। প্রতারিতদের টাকা ফেরত দিতে হবে।’’

এই মুহূর্তে তৃণমূল-বিজেপির সংঘাতে লাভবান হচ্ছে গেরুয়া শিবিরই। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও তা বুঝতে পারছেন। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরে যদি তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হয়, তার লাভও বিজেপিই পাবে। তাই রাজ্যে বিজেপি বাড়ার জন্য অধীরবাবু মমতাকেই দায়ী করেন। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের ছ’বছরে যে ভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বেড়েছে, তা অতীতে হয়নি। মমতাই বিজেপির বৃদ্ধিকে সাহায্য করছেন। কিন্তু কোর্টের নজরদারিতে চলা সিবিআই তদন্তে তাপস-সুদীপ গ্রেফতারের পরে এখন বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামছেন।’’

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পথ অবরোধের নিন্দা করে মান্নান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ক’দিন আগেও বলেছিলেন, অবরোধ বরদাস্ত করবেন না। আর সিবিআই দুই সাংসদকে গ্রেফতারের পরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করছেন। এ কেমন দ্বিচারিতা?’’ দিল্লিতে তৃণমূলের সঙ্গে মোদী-বিরোধী আন্দোলন আর এখানে বিরোধিতা কি সম্ভব? মান্নানের জবাব, ‘‘দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মাথায় রেখে চিরকাল কংগ্রেস এ ভাবেই চলে। ইউপিএ-১ এর জমানায় দিল্লিতে সিপিএমের সাহায্য নিয়ে সরকার চালানোর সময়েও রাজ্যে ফ্রন্টের বিরোধিতা করেছি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের বিরুদ্ধে পথেও নেমেছি।’’

দুর্ভোগ চলছেই

আটকে পণ্য পরিবহণ

• রানিগঞ্জের চাঁদা মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ

• রানিগঞ্জে অবরোধ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক

• রানাঘাটে ৩৪ নম্বর জাতীয়সড়ক অবরোধ

• আলিপুরদুয়ারের পাকড়িগুড়িতে অবরোধ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক

আটকে গেল ট্রেন

• বাঁকুড়া-মশাগ্রাম লাইনে বেলিয়াতোড় স্টেশনে

• নিউ কোচবিহারে লাইনে অবরোধে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

• লাইন অবরোধ কোচবিহার জেলার মাথাভাঙাতেও

• রানাঘাট স্টেশনের কাছে অবরোধ

• উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর রেলগেট অবরোধ

• বারাসত-হাসনাবাদ শাখার কড়েয়া কদম্বগাছি স্টেশনের কাছে অবরোধ

হামলার অভিযোগ

• কোচবিহারে বিজেপি অফিস ভাঙচুর

• বাসন্তীতে বিজেপি কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন