কেন বদলি আইসি, ক্ষোভ বাড়ছে পুলিশে

এক জন আইসি বদলি হয়েছেন। সঙ্গে বদলি করা হয়েছে রাজ্যের আরও ১২ জন পুলিশ অফিসারকে। তালিকায় আছেন আইসি, ওসি, সিআই-রাও। কিন্তু, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি দেবাশিস সাহার বদলি ঘিরে পুলিশের নিচুতলার ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন উঁচুতলার কর্তারাও। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে দুর্গাপুরের এক মহিলার শ্লীলতাহানি ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাঁকুড়া পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী, যুব তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ‘ক্যাসেট বাপি’-র বিরুদ্ধে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

এক জন আইসি বদলি হয়েছেন। সঙ্গে বদলি করা হয়েছে রাজ্যের আরও ১২ জন পুলিশ অফিসারকে। তালিকায় আছেন আইসি, ওসি, সিআই-রাও। কিন্তু, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি দেবাশিস সাহার বদলি ঘিরে পুলিশের নিচুতলার ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন উঁচুতলার কর্তারাও।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে দুর্গাপুরের এক মহিলার শ্লীলতাহানি ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাঁকুড়া পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী, যুব তৃণমূল নেতা পীযূষ চক্রবর্তী ওরফে ‘ক্যাসেট বাপি’-র বিরুদ্ধে। ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বাপির হাতে বাঁকুড়া থানার এক এএসআইয়ের মার খাওয়ার ঘটনা হজম করতে পারেননি বাকি পুলিশকর্মীরা। ওই এএসআইয়ের মোবাইল মাটিতে ফেলে বাপি পা দিয়ে ভেঙে দেন বলেও অভিযোগ। পুলিশকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, বাপির এই স্পর্ধা হয় কী করে!

সে রাতেই বাপিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শেষ অবধি বাপিকে গ্রেফতার করে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়। ঘটনার পরেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী পুলিশ পেটানোর অভিযোগ ‘মিথ্যা’ ও ‘সাজানো’ দাবি করে বাপিকে ‘সৎ’ ও ‘সমাজকর্মী’ তকমা দেওয়ায় পুলিশ মহলে ক্ষোভ ছড়ায়। ঘটনাচক্রে বুধবারই সন্ধায় বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা জেলা থেকে বদলির নির্দেশ হাতে পাওয়ায় ক্ষোভ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ সূত্রের খবর, জেলার পুলিশ কর্তাদের নির্দেশেই বাপিকে ধরেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। অথচ শুধু তাঁর উপরেই কেন ‘কোপ’ পড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সভাধিপতির ঘনিষ্ঠ নেতাকে ধরাতেই এই বদলি, এই মর্মে জোর আলোচনা শুরু হয়ে যায় পুলিশ মহলে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও এই প্রশ্ন তুলে ধরেন জেলার পুলিশ কর্তারা।

Advertisement

এই ক্ষোভের আবহেই পুলিশের একটি মহল থেকে শোনা যাচ্ছে, বিশ্বজিৎবাবুর বদলি রদ হয়ে যেতে পারে। বস্তুত, শুক্রবার দিনভর এই জল্পনা দাবানলের মতো ছড়িয়েছে গোটা জেলায়। যদিও বদলি স্থগিত হওয়ার বিষয়টির কোনও সরকারি সমর্থন মেলেনি। মন্তব্য করতে চাননি বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার। তবে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশেরই এক দায়িত্বশীল কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের আইসি বদলি হচ্ছেন না। তিনি এখানেই থাকবেন!’’ এখানে লক্ষণীয়, ‘আমাদের’ শব্দটা। অধস্তনের বদলির পরে ঊর্ধ্বতন অফিসারের মুখে এমন কথা সচরাচর শুনতে একেবারেই অভ্যস্ত নয় পুলিশের নিচুতলা।

রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেও একই জল্পনা ভেসে আসছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বাঁকুড়াই বাসিন্দা অমিয় পাত্র এ দিন বলেন, ‘‘জেলার পুলিশ কর্তারাই আইসি-র বদলি মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা এ নিয়ে শীর্ষ আধিকারিকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার জেরে আইসি-র বদলি স্থগিত হতে পারে বলে পুলিশ মহল থেকে খবর পেয়েছি।’’ বাঁকুড়া জেলা আদালতের আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও খবর, আইসি-র বদলি নাকি আটকে যাচ্ছে।’’

কলকাতা পুরভোটের দিন (১৮ এপ্রিল) সন্ধে সাড়ে সাতটা। গিরিশ পার্কে সাব ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিন ঘণ্টা কেটেছে। বন্দর এলাকার এক ওসি নিজের ফেসবুক দেওয়ালে লিখলেন— ‘পুলিশই কেন সব সময়ে সব রাজনৈতিক দলের শিকার হবে? ভোটারদের নিরাপত্তা এবং ভোটযন্ত্র ও ভোটকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন আমাদের এক জন অফিসার। কিন্তু বিনিময়ে তিনি পেয়ে গেলেন তাঁর জীবনের সব চেয়ে দামি উপহার— একটা বুলেট!’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই পোস্ট-এ ৯০টি ‘লাইক’ পড়ে গিয়েছিল। যাঁরা ‘লাইক’ করেছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশ কলকাতা পুলিশের অফিসার।

বিদ্রোহের আঁচ পেয়েছিল লালবাজার। পোস্ট উড়েও যায় দেওয়াল থেকে। ক্ষোভ কিন্তু রয়েই গিয়েছে। বাঁকুড়ায় তারই প্রতিফলন হয়েছে বলে মনে করেন বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার। তাঁর মন্তব্য, “অন্য জেলাগুলিতেও নিচুতলার পুলিশ মহলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। শেষ পর্যন্ত আইসি-র বদলি রদ না জেলায় বিদ্রোহের পথেও হাঁটতে পারেন পুলিশকর্মীরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন