BJP

‘বিজেপি বাঁচাও’ স্লোগানের সঙ্গে শীর্ষনেতাদের ছবিতে জুতো, লাথি! পদ্মের রাজ্য দফতরে বেনজির বিক্ষোভ

বিজেপির ঘরোয়া অশান্তি লেগেই রয়েছে। বুধবারই সল্টলেকের দফতরে একদল বিক্ষুব্ধ কর্মী তালা ভাঙার চেষ্টা করে। আর বৃহস্পতিবার কর্মী বিক্ষোভ দেখা গেল মুরলীধর সেন লেনের দফতরে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২১
Share:

মুরলীধর সেন লেনের দফতরের সামনে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির রাজ্য দফতরে এই ধরনের বিক্ষোভ অতীতে দেখা গিয়েছে কি না, মনে করতে পারছেন না দলেরই নেতারা। বৃহস্পতিবার মূলত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলের ‘আদি’ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ‘নতুন’দের গুরুত্ব দিতে গিয়ে দীর্ঘ দিন দলের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের ভুলতে বসেছে। এমন বিক্ষোভ জেলায় বা কলকাতায় আগেও হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার শীর্ষনেতাদের ছবিতে জুতো ছোড়া থেকে রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভ দেখাতে আসা বিজেপি কর্মীদের। বিজেপি দফতরের সামনে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যের ছবি। সেই ছবির উপরে লাথি মারতে থাকেন বিক্ষুব্ধেরা। বিজেপির মতো ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ দলে যা বেনজির বলেই মনে করছেন পদ্মনেতারা।

Advertisement

এখন রাজ্য বিজেপি মূলত পরিচালিত হয় বিধাননগরের সেক্টর ফাইভের দফতর থেকে। তবে খাতায়কলমে রাজ্যের সদর দফতর উত্তর কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে। সেই দফতরেই ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’। জানা গিয়েছে, বীরভূম, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া থেকে কর্মীরা আসেন বিক্ষোভ দেখাতে। বিক্ষোভের সামনের দিকে ছিলেন রামপুরহাটের বিজেপি নেতা অভয়শঙ্কর রায়ের বক্তব্য, ‘‘নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে আমরা রাজি রয়েছি। কিন্তু তার জন্য বিজেপিকে বিক্রি করে দিতে দেব না। আমরা নেরেন্দ্র মোদীকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই। কিন্তু বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে। জেলায় জেলায় একই ছবি। এর পরিবর্তন না-হলে এমন বিক্ষোভ চলতেই থাকবে।’’

প্রসঙ্গত গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপিতে ‘আদি’ নেতাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরে রাজ্য এবং জেলায় জেলায় নতুন কমিটি তৈরি হওয়ার পরে ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিক্ষুব্ধ শিবির। অতীতে জেলা স্তরে তো বটেই কলকাতায় সদর দফতরেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে এই সংগঠন। তবে এ বার বড় মাপের বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে বসিরহাটের নেতা দীপককুমার সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব দলকে চালাতেই পারছে না। তৃণমূল থেকে আসা নেতাদেরই জেলায় জেলায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। বিজেপিকে বাঁচাতে তাই বিজেপির পুরনো কর্মী-নেতারা রাস্তায় নেমেছেন।’’

Advertisement

সম্প্রতি একের পর এক জেলায় দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ সামনে এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মথুরাপুর থেকে যাদবপুরের কর্মীরা নতুন জেলা কমিটি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। সেই ক্ষোভ দেখানো হয়েছে বিধাননগরের দফতরেও। বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে দলীয় দফতরে তালাবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে। দিন কয়েক আগেই বারুইপুরে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ।

বুধবারই বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার এক দল কর্মী দলের সল্টলেকের দফতরে বিক্ষোভ দেখাতে আসেন। জেলা সভাপতি তৃণমূলের সঙ্গে ‘সেটিং’ করে দল পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ ছিল তাঁদের। সেই সময়ে দলের দফতরের মূল ফটকটি তালা বন্ধ ছিল। কেউ কেউ পাঁচিল টপকে দলের দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন আবার কেউ আধলা ইট দিয়ে গেটের তালা ভাঙারও চেষ্টা করেন।

তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ। আগে থেকেই অবশ্য ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ এমন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল। মুরলীধর সেন লেনের দফতরে অবশ্য কোনও প্রথম সারির নেতা বৃহস্পতিবার দুপুরে উপস্থিত ছিলেন না। সেই সময়ে সল্টলেক দফতরে চলছিল বৈঠক। যদিও বৃহস্পতিবার সকালেই এই ধরনের বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দলে অনেক নতুন লোক এসেছেন। তাঁদের জায়গা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পুরনো যাঁরা পার্টির মধ্যে ছিলেন, তাঁরাও গুরুত্ব পেতে চাইছেন। ফলে একটা অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে। পরিবার বাড়লে, বেশি লোক এলে সমস্যা হয়।’’ একই সঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘বিজেপিতে যাঁরা নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁদের উচিত সবার সঙ্গে কথা বলে, যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁদের ক্ষোভের কথা শোনা। আমার মনে হয় ঠিক মতো শোনা হচ্ছে না। তাই বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন