গণধর্ষণে ফাঁসির দাবি, অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক

লড়াই থামল নির্যাতিতার

শুক্রবার সকালে নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর চাউর হতেই কোলাঘাটে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। অবিলম্বে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তোলে জনতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৯
Share:

জাতীয় সড়ক অবরোধ করে মোমবাতি-বিক্ষোভ।

প্রথমে গণধর্ষণ ও পরে তার ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে অপমানে, লজ্জায় বিষ খেয়েছিল কোলাঘাটের নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রী। গত ২৪ অগস্ট ওই ঘটনায় নির্যাতিতাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে তাকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মারা গেল ওই নির্যাতিতা।

Advertisement

শুক্রবার সকালে নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর চাউর হতেই কোলাঘাটে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। অবিলম্বে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তোলে জনতা। গণধর্ষণের ওই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই চার জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত নির্যাতিতার প্রেমিককে এখন আটক করে রাখা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে দায়ের করা অভিযোগে তার নাম থাকলেও কেন তাকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। ঘটনায় আর এক অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডল এখনও পলাতক। আকাশের দাদা কোলাঘাট থানার অধীন একজন ভিলেজ পুলিশ। সে জন্যই তাকে গ্রেফতারে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস , ‘‘কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে উপযুক্ত প্রমাণ চাই। আটক অভিযুক্তকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

এদিন মৃত স্কুলছাত্রীর দেহ পুলশিটা এলাকায় তার বাড়িতে পৌঁছনোর আগে থেকেই সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষজন। প্রত্যেকেরই চোখ মুখে ছিল ক্ষোভ ও বেদনার ছাপ। রাজ্যের এক কন্যাশ্রীর এমন মৃত্যুতে চোখের জল ফেলতেও দেখা যায় জনতার একাংশকে। এক জন স্কুলছাত্রীর এমন পরিণিতিতে মহিলাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন নিজেদের বাড়ির মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও।

নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছনোর পর তার স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। চায়ের দোকান থেকে বাজারহাট সর্বত্রই দাবি ওঠে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি চেয়ে। জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি। দেউলিয়া বাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে ডিওয়াইএফ। সমাবেশ থেকে এমন অভিযোগও তোলা হয়, শাসক দলের পক্ষ থেকে টাকার বিনিময়ে তদন্তের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের অফিসে এ দিন গণধর্ষণে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।

এ দিন এলাকা ঘুরে অভিযুক্তদের সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায় গিয়েছে। অভিযুক্তরা একসঙ্গেই এলাকায় আড্ডা দিত। ধৃত চারজনের মধ্যে দুজন ছাত্র। তাদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ধৃতদের একজন সমীর মণ্ডল স্নাতক পাস করে এলাকারই একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তার পরিবারের দাবি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বিশ্বজিৎ পাত্র নামে একজন সমীর ও সমীর দোলই নামে আর এক জনকে ফোন করে ডাকে অকুস্থলে। সেখানে তখন হাজির ছিল ওই ছাত্রীর প্রেমিক ও মূল অভিযুক্ত। মণ্ডল পরিবারের দাবি সমীর মণ্ডল ও সমীর দোলই ঘটনাস্থলে গিয়ে বাকিদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে সেখান থেকে চলে আসে। ধৃত সমীর মণ্ডল ও সমীর দোলই নির্দোষ এবং তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি দু’জনের পরিবারের।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নির্যাতিতার প্রেমিক ও বিশ্বজিতের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। এলাকায় এর আগে রাতের অন্ধকারে একাধিকবার ওই ছাত্রীকে তার প্রেমিক ও বিশ্বজিতের সঙ্গে দেখা গিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, পলাতক আকাশের বাবা শাসক দলের কর্মী। ধৃত বিশ্বজিৎ পাত্রও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। সেই কারণেই কি তদন্তে গতি কম পুলিশের, প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

স্থানীয় সিপিএমের মহিলা নেত্রী নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে নারীরা যে নিরাপদে নেই তা এই ঘটনায় ফের প্রমাণিত। এই সরকার কাটমানি ছাড়া কিছু বোঝে না। কাটমানি দিয়ে এই ঘটনাকেও তারা চাপা দিতে চায়। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে বলব ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠুন।’’ এসইউসি নেত্রী অনিমা হান্ডা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রী নিয়ে গর্ব করেন। অথচ তাঁর রাজ্যেই এক স্কুলছাত্রীর এই পরিণতি। মূল অভিযুক্তের বাবা শাসক দলের ছাতার তলায় আছেন। তাই তাঁর ছেলেকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে আমরা সার্বিক প্রতিবাদ গড়ে তুলব।’’

মৃত ছাত্রীর মায়ের দাবি, ‘‘মূল অভিযুক্তের বাবা আমাদের টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছিলেন। টাকার বিনিময়ে উনি আমার মেয়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবেন তো? আমি ওদের ফাঁসি চাই।’’

এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ নির্যাতিতার মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছয়। সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। মৃতদেহে মালা দিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তাঁরা। বিজেপির রাজ্য সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষ এলাকায় যান। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রশাসন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে সিআইডি লেলিয়ে দিতে পারে। অথচ দোষীদের গ্রেফতার করতে পারে না। আমরা সাতদিন সময় দিলাম। তার মধ্যে সমস্ত অভিযুক্তকে যদি গ্রেফতার না করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে চার্জশিট না দেয়, তা হলে আমরা আন্দোলন করে গোটা এলাকা স্তব্ধ করে দেব।’’

এসএফআই, ডিওয়াইএফের পক্ষ থেকে মোমবাতি নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন