ক্ষতিপূরণের দাবিতে কোলাঘাট ব্লক অফিসে বিক্ষোভ— নিজস্ব চিত্র।
একদিকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তমলুকে বৈঠক করলেন কৃষিমন্ত্রী, অন্য দিকে জলবন্দি বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখালেন কোলাঘাটে।
সোমবার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করতে তমলুকে আসেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক ভবনে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের জেলা, মহকুমা ও ব্লক আধিকারিকরা। এ বার বন্যায় বিভিন্ন ধরনের চাষে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা ও বন্যা পরবর্তী চাষে সাহায্যের জন্য কী কী চাহিদা রয়েছে তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিক।
দুই জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় আমন, আউশের রোয়া ধান, ধানের বীজতলা, পান, ফুল, সব্জি, মশলা প্রভৃতি চাষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে মন্ত্রী জানান, ‘‘বন্যায় সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। বন্যা পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য ২১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন।’’ মন্ত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ফের সর্বদলীয় বৈঠক করবেন। সেখানে এ বিষয়ে যাবতীয় খতিয়ান তুলে ধরবেন। কেন্দ্র কতটা সাহায্য করছে তা দেখে নিয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রীর কাছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের পক্ষ থেকে যে হিসাব তুলে দেওয়া হয়েছে, তাতে মোট ৫৪২ কোটি টাকার ক্ষতির দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আমন ও আউশ ধানের রোয়াজমি, বীজতলা মিলিয়ে প্রায় ৪৮৭ কোটি টাকা এবং পান, ফুল, সব্জি, মশলা চাষের মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।
একইভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের পক্ষ থেকে মোট ৬৮৫ কোটি টাকার ক্ষতির হিসেব দেওয়া হয়েছে। আমন, আউশ ধানের রোয়া ও বীজতলা মিলিয়ে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা এবং পান, ফুল, সব্জি ও মশলা চাষ মিলিয়ে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা ক্ষতির হিসেব দেওয়া হয়েছে। দুই জেলার কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের পক্ষ বন্যা পরবর্তী চাষের জন্য বীজধান, সর্ষে, গম, চীনা বাদাম চাষের বীজ, সার, কীটনাশক এবং ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, বেগুন, কুমড়ো, টমেটো প্রভৃতি চাষের মিনিকিট চাওয়া হয়েছে। বন্যার জল নামলেই ফের শুরু হবে আমন চাষের জন্য মিনিকিট বিলির কাজ। সে জন্য ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরকে ৮৭১ মেট্রিক জলদি জাতের বীজ ধান এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরকে ৩০০ মেট্রিক বীজধান বরাদ্দ করা হয়েছে বলে খবর।
জেলার কৃষি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।
রয়েছেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
এ দিকে সোমবারই কোলাঘাটের বন্যা কবলিত এলাকার জলবন্দি বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান বিডিও অফিসে। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে কোলাঘাট ব্লকের বন্যা কবলিত সিদ্ধা ১, সিদ্ধা ২, বৃন্দাবনচক, সাগরবাড়, পুলশিটা প্রভৃতি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার কয়েক’শো বাসিন্দা এ দিন বিকেলে কোলাঘাট বিডিও অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, এলাকায় জলনিকাশির খালগুলি সংস্কার করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত ধান, পান, ফুল, সব্জি চাষের ক্ষতিপূরণ ও পরবর্তী চাষের ফসল না ওঠা পর্যন্ত সব পরিবারকে রেশন দামে খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ করতে হবে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া ব্লকের জল নিকাশির প্রধান ভরসা দেহাটি খাল ও টোপা খাল সংস্কার না হওয়ার ফলে এ বার বন্যার পরে ১৫ দিন কেটে গেলেও কোলাঘাট ব্লকের প্রায় ২৫ টি গ্রাম এখনও জলবন্দি হয়ে রয়েছে। এর ফলে ধান, পান, ফুল, সব্জি চাষিদের ব্যপক হয়েছে।’’
অন্য দিকে, চাষের ক্ষতি নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত বাসিন্দারা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বৃন্দাবনচক গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দা পূর্ণ নায়েক বলেন, ‘‘ধানজমি, ফুলের খেত, রাস্তা— সব ডুবে গিয়েছে। প্রায় ১৫ দিন পরেও জল নামেনি। আমার ২৬ কাঠা জমির রোয়া ধান, ৩২ ডেসিমল রজনীগন্ধা, ১৩ ডেসিমল জমির গাঁদা ও ১২ ডেসিমল জমির বেল ফুলের চাষ জলে ডুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’’
কোলাঘাটে কৃষকদের ওই বিক্ষোভের প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রী বলেন, ‘‘আন্দোলন হতেই পারে। রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ফের চাষে সাহায্যের জন্য আমরা সবরকমভাবে সাহায্য করব।’’ পাশাপাশি কৃষি বীমা করার ক্ষেত্রে রাজ্যের কৃষকরা পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘আলু চাষের ক্ষেত্রে কৃষি বীমার কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এ রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের প্রতি অবহেলা ছিল। আমরা কৃষি বীমার উপর বিশেষ জোর দিয়েছি।’’ বৈঠকে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে দরবার করেন প্রশাসনিক কর্তারা।