রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের ‘‘সৌজন্য সাক্ষাতের’’ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মালদহের রাজনৈতিক মহল রীতিমতো থমথমে। তৃণমূলের কাউন্সিলাররা মুখে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর সমর্থনে তাঁদের ঐক্যবদ্ধতার কথা বললেও, ইংরেজবাজার পুরসভা গঠনের জন্য ভোটের দিন বাস্তবিক দলের মধ্যেই ‘ক্রস ভোটিং’ হবে কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে শাসক-বিরোধী, সব মহলেই। এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণেন্দু মঙ্গলবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে এসে সাক্ষাৎ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সির সঙ্গে। মিনিট দশেক কথাবার্তার পরেই তাঁকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
আজ, বুধবার, কলকাতায় দলের সব জয়ী কাউন্সিলারদের সঙ্গে কলকাতায় বৈঠক করার কথা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে তৃণমূল ভবনে গিয়ে কৃষ্ণেন্দুর এ ভাবে সুব্রত বক্সি-সহ নানা নেতার সঙ্গে দেখা করাকে দলের উপর চাপ তৈরির কৌশল বলে মনে করছে দলেরই একাংশ। এ দিকে কৃষ্ণেন্দু-বিরোধী কাউন্সিলররাও এদিন কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দুকে সমর্থন করার জন্য মমতা নির্দেশ বা ‘হুইপ’ দেন কিনা, সে দিকে তাকিয়ে মালদহের তৃণমূল।
এ দিন তৃণমূলের অন্দরে কলহের জল্পনা উস্কে দিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘চেয়ারম্যান পদ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। শুনেছি তাঁদের দলের কেউ আমাদের রাজ্য নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। কী আলোচনা হয়েছে বলতে পারব না।’’ তবে কৃষ্ণেন্দুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁকে সামনে রেখে ইংরেজবাজারে পুরসভা নির্বাচনে লড়েছে দল। ফলে তিনিই চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার জন্য কৃষ্ণেন্দু নিজে যদি চেয়ারম্যান না-ও হন, তাঁর স্ত্রী কাকলি চৌধুরী হতে পারেন।
কিন্তু হাওয়ায় ভাসছে আরও নাম। দলের মধ্যে কৃষ্ণেন্দু-বিরোধীরা চেয়ারম্যান পদে দুলাল (বাবলা) সরকারের নাম বলছেন। রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ অম্লান ভাদুড়ির নামও চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে শোনা যাচ্ছে। দুলালবাবু নিজে অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কৃষানদা-র (কৃষ্ণেন্দু) নেতৃত্বে পুরসভায় আমরা লড়াই করেছি। দল যা বলবে সেই নির্দেশেই আমরা চলব।’’ একই কথা বলছেন অম্লানবাবুও।
তবে দলের অন্দরে কানাঘুষো, বাম-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহার ঘোষকে সামনে রেখে দলের বিক্ষুব্ধরা জোট বাঁধতে পারে। এই বিক্ষুব্ধদের দাবি, কৃষ্ণেন্দুর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে জনসমর্থন হারাতে বসেছে তৃণমূল। সেই জন্যই তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল প্রার্থী হেরে গিয়েছে পুরভোটে। তাঁর স্ত্রী কাকলি জিতেছেন মাত্র ১৮ ভোটে। তাই নেতৃত্বে পরিবর্তন চাইছেন তাঁরা। এমনকী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ দিলেও শেষ অবধি পুরবোর্ড গঠনের গোপন ভোটাভুটিতে সে নির্দেশ মানা হবে কিনা, ধন্দ দেখা দিচ্ছে তা নিয়েও।