বন্ধ চা বাগান এবং শ্রমিকদের অনাহারে মৃত্যু নিয়ে গত এক বছর বঙ্গের রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। কেন্দ্র ৭টি চা বাগান অধিগ্রহণও করেছে। অথচ ২১১টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়ার পরই বিধানসভায় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক দাবি করলেন, রাজ্যে কোনও চা বাগানই বন্ধ নেই অনাহারে মৃত্যুও হয়নি! কোনও শ্রমিক আত্মহত্যাও করেননি!
বিধানসভায় মঙ্গলবার প্রথম পর্বে প্রশ্নোত্তর চলাকালীন আরএসপি-র বিশ্বনাথ চৌধুরী জানতে চান, রাজ্যে বর্তমানে কত চা বাগান বন্ধ রয়েছে, সেগুলির শ্রমিকদের কী কী সাহায্য করা হচ্ছে, এ বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বন্ধ চা বাগানগুলিতে অপুষ্টি বা অনাহারে ক’জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এবং ওই সময়ের মধ্যে বন্ধ চা বাগানে কত শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন? মন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যে কোনও চা বাগান বন্ধ নেই! এ বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে চা বাগানগুলিতে অপুষ্টি বা অনাহারে কোনও চা শ্রমিকের মৃত্যু বা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। সরকারের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে রুগ্ন চা বাগানগুলির শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ, ওষুধ, খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র অশোক ঘোষ জানান, দার্জিলিংয়ে অ্যালকেমিস্টের ৫টি, ডুয়ার্সে রাজ্য সরকার অধিগৃহীত ৪টি এবং আরও ৫টি চা বাগান বন্ধ। ডানকানের ৭টি বাগান কেন্দ্র অধিগ্রহণ করলেও উৎপাদন শুরু হয়নি, শ্রমিকরা বেতন পাননি। আরও অনেক চা বাগান বন্ধ না হলেও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মলয়বাবুর জবাবে বিস্মিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
বন্ধ বাগান এবং শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে গত শনিবার দলের রাজনৈতিক কর্মশালায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। চা বাগান অধিগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে নির্বাচনী বুজরুকিও বলেন তিনি। সে দিক থেকে মন্ত্রীর এই মন্তব্য বিস্ময়কর বইকি!
বিশ্বনাথবাবু এ দিন সভার বাইরে বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা পড়ছে না। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অথচ মন্ত্রী সদুত্তর দিচ্ছেন না।’’ মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার কথায়, ‘‘আমি স্কুল শিক্ষক। প্রতি দিন ৫-৬টা বন্ধ চা বাগান পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয়। আমার স্কুলের অনেক ছাত্র চা শ্রমিকের সন্তান। বাগানে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ বলে তারা প্রায়ই স্কুল ছেড়ে নদীতে পাথর ভাঙতে চলে যায়। কারণ সেখানে মজুরি মেলে।’’