বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম দিতে শুরু করেছেন কমিশন নিযুক্ত বিএলও-রা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। গ্রাম থেকে শহর, বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছোতে শুরু করেছেন কমিশনের বুথ স্তরের আধিকারিকেরা (বিএলও)। শুরু হয়ে গিয়েছে এনুমারেশন ফর্ম বিলিও। এসআইআরকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মনে বিবিধ প্রশ্ন রয়েছে। বিএলও-রা বাড়িতে গেলে কী করণীয়, তা অনেকের কাছেই এখনও স্পষ্ট নয়। বিএলও পরিচয়ে যিনি বাড়িতে আসছেন, তিনি আদৌ কমিশন নিযুক্ত আধিকারিক কি না— তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। বিএলও বাড়ি গিয়ে ভোটারের দেখা না-পেলে কী হবে, তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে অনেকের।
বাড়িতে বিএলও এলে, চিনবেন কী ভাবে?
মনে রাখবেন, বিএলও-রা হলেন কমিশন নিযুক্ত আধিকারিক। তাই তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র থাকবে। সেই পরিচয়পত্র একটি কিউআর কোডও থাকবে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ওই কিউআর কোড স্ক্যান করে ভোটারেরা যাচাই করে নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বিএলওর পরিচয়। এ ছাড়া কমিশনের দেওয়া এনুমারেশন ফর্মগুলিতেও সংশ্লিষ্ট বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও-র নাম এবং ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে।
বিএলও-দের সঙ্গে কি রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা থাকবেন?
এসআইআর প্রক্রিয়ার সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলির বুথ স্তরের এজেন্টদের (বিএলএ)-ও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে কমিশন। সে ক্ষেত্রে বিএলও-দের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের এজেন্টদেরও থাকার কথা। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতিতে সব বুথে সব রাজনৈতিক দলের এজেন্ট থাকবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কমিশন জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে রাজ্যে ৪১৮০০ বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ-২)-এর নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তবে কোন রাজনৈতিক দল কত এজেন্ট দিয়েছে এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বুথের সংখ্যা ৯৪ হাজারের বেশি। প্রধান যুযুধান দুই দল তৃণমূল এবং বিজেপি সব বুথে বিএলএ-দের নাম নথিভুক্ত করলে তা ১ লক্ষ ৮০ হাজার ছাপিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্র ৪১৮০০ বিএলএ-র নাম নথিভুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে।
বিএলও এলেন, অথচ আপনি বাড়িতে নেই, তখন?
এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে আসা বিএলও-দের কাছে সংশ্লিষ্ট বুথের সব ভোটারের বিষয়ে তথ্য থাকার কথা। ফলে বিএলও আপনার বাড়িতে কখন আসবেন, তা আপনার আগে থেকে জেনে যাওয়ারই কথা। তা-ও যদি কোনও কারণে সেই সময় আপনি বাড়িতে না-থাকেন, চিন্তার কিছু নেই। আপনার বাড়িতে বিএলও আবার আসবেন। অন্তত তিন বার আপনার ঠিকানায় এসে খোঁজ করবেন কমিশন নিযুক্ত ওই আধিকারিক।
বিএলও আপনার কাছে কী চাইবেন, কোন কোন নথি রাখতে হবে?
বিএলও আপনার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের প্রত্যেক ভোটারের জন্য দুই সেট এনুমারেশন ফর্ম দেবেন। আপনাকে দু’টি ফর্মই পূরণ করে সই করতে হবে। বিএলও-ও তাতে সই করবেন। এর পরে কমিশনের জন্য তিনি একটি ফর্ম নিয়ে নেবেন। অন্যটি স্ট্যাম্প-সহ আপনাকে ফেরত দিয়ে দেবেন। সেটি পরবর্তী সময়ে আপনার কাজে লাগতে পারে। বিএলও আপনার বাড়িতে গেলে বেশ কিছু নথি আপনাকে হাতের কাছে তৈরি রাখতে হবে। যেমন, আপনার বর্তমান ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, দু’টি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট ছবি এবং ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে আপনার কী যোগসূত্র রয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্যও তৈরি রাখতে হবে। ২০০২ সালে শেষ এসআইআর হয়েছিল। ওই সময়ের ভোটার তালিকায় আপনার বা আপনার বাবা-মায়ের কিংবা ঠাকুরদা-ঠাকুমার নাম থাকলে আপনাকে আলাদা করে কোনও নথি দিতে হবে না। অন্যথায় কমিশন যে ১১টি নথির কথা বলছে, সেই অনুসারে আপনাকে নথি জমা দিতে হবে।
এনুমারেশন ফর্ম দেখতে কেমন হবে?
এনুমারেশন ফর্মে ভোটারের নাম, ঠিকানা, এপিক নম্বর, বিধানসভা কেন্দ্র, বুথ এবং পার্ট নম্বর আগে থেকেই ছাপানো থাকবে। এ ছাড়াও, সংশ্লিষ্ট ওই ভোটারের পুরনো ছবিও থাকবে এনুমারেশন ফর্মে। ফর্মের একেবারে ডান দিকের উপরে নতুন ছবি সাঁটার জায়গাও থাকবে। এনুমারেশন ফর্ম নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, বাবা-মা বা অভিভাবক কিংবা আত্মীয়ের নাম দিয়ে পূরণ করতে হবে। যে আত্মীয়ের নাম দেওয়া হবে, তাঁর সম্পর্কিত তথ্যও পূরণ করার জায়গা থাকবে ফর্মে। কেউ চাইলে আধার কার্ডের নম্বরও ফর্মে দিতে পারেন। ওই ফর্মের একদম নীচে যিনি ফর্ম পূরণ করছেন, তাঁকে স্বাক্ষর করতে হবে। শেষে বিএলও সই করবেন ওই এনুমারেশন ফর্মে।
এনুমারেশন ফর্ম পূরণের সঙ্গে সঙ্গেই বিএলও-দের কাছে প্রয়োজনমতো ১১টি মধ্যে আপনার কাছে যা যা নথি আছে, তা দিতে পারেন। তবে পরেও নথি জমা দেওয়া যাবে। বিএলও গিয়ে সেই নথি নিয়ে আসবেন। বিএলও-রা পূরণ করা এনুমারেশন ফর্মের ছবি পাঠিয়ে দেবেন কমিশনকে।
পরিবারের অন্য কেউ আপনার হয়ে ফর্ম পূরণ করতে পারেন?
হ্যাঁ। পরিবারের যে কোনও সদস্যই আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার হয়ে ফর্ম পূরণ করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার জন্য পরিবারের ওই সদস্যের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা প্রয়োজন। আপনার অনুপস্থিতিতে যিনি ওই ফর্মটি পূরণ করছেন, তাঁকেই সেটিতে সই করতে হবে। পরবর্তী সময়ে কমিশনের আপনার বিষয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতাও আপনার পরিবারের ওই সদস্যেরই।
এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে কার কাছে জমা দেবেন?
আপনি ফর্মটি পূরণ করার পরে সংশ্লিষ্ট বিএলও-ই তা আপনার থেকে সংগ্রহ করবেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই প্রক্রিয়া চলবে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার পরে আগামী ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। ওই তালিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে অভিযোগ শোনা এবং খতিয়ে দেখার কাজ। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা যাবে?
হ্যাঁ, অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা যাবে। যাঁরা কর্মসূত্রে অন্য কোনও প্রয়োজনে বাইরে রয়েছেন, তাঁদের জন্য অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। তবে মঙ্গলবার থেকে ওই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরের এক আধিকারিক জানান, অনলাইন প্রক্রিয়াটি বাড়তি সুবিধা। তবে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে মিলবে না এই সুবিধা। কবে থেকে অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা যাবে, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাননি তিনি। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনলাইন পরিষেবা শুরু করতে দু’-এক দিন দেরি হতে পারে।’’
এসআইআর কি আপনার নাগরিকত্বের উপর প্রভাব ফেলবে?
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ভোট পরিচালনা করা। আপনি এই দেশের বৈধ ভোটার কি না, তা যাচাই করার জন্যই এসআইআর শুরু করেছে কমিশন। তবে আপনার নাগরিকত্ব স্থির করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই।