পরীক্ষার পর পরীক্ষাতেই কলেজের ক্লাস শিকেয়

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, পড়ুয়ারা পঠনপাঠনে মন দিন। আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলছেন, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস না-করলে ফেল করবেন। কিন্তু সত্যিই কি নিয়ম মেনে ক্লাস করার মতো অবস্থা রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে?

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, পড়ুয়ারা পঠনপাঠনে মন দিন। আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলছেন, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস না-করলে ফেল করবেন। কিন্তু সত্যিই কি নিয়ম মেনে ক্লাস করার মতো অবস্থা রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে?

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, ছুটিছাটা বাদ দিয়ে কলেজগুলিতে বছরে ২১০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ কলেজেরই অধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, ক্লাস হয় সাকুল্যে ১২০ দিন। কেন? ওই সব অধ্যক্ষের মন্তব্য, কারণ একটাই— পরীক্ষার পর পরীক্ষা। কলেজে মিড টার্ম ও টেস্ট আগেও ছিল, এখনও আছে। বিএ, বিএসসি, বিকমের পরীক্ষা আগেও হত, এখনও হয়। তাতে বড়জোর ৩০ দিন লাগত। কিন্তু এখন হরেক পরীক্ষাতেই চলে যাচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ দিন। কেন?

আগে প্রথম দু’বছরের পরে পার্ট-১ এবং তৃতীয় বছরের শেষে পার্ট-২ পরীক্ষা দিতে হত। আগে কোনও বিষয়ে ফেল করলে পরের বছর বিএ, বিএসসি, বিকমের পার্ট-১ বা পার্ট-২ পরীক্ষার সঙ্গেই সেই বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হত। ২০০৫ সাল থেকে বিএ, বিএসসি, বিকমে পার্ট-৩ পরীক্ষা চালু হতেই নতুন পরীক্ষাসূচির জন্য হাত পড়ে ক্লাসের সময়ে। আর ফেল করা বিষয়ে পাশ করার জন্য সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চালু হওয়ার পরে থেকে কলেজের পড়াশোনার নির্ঘণ্টটাই পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য বিভাগের চয়েস বেস্‌ড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস)-এর পরীক্ষাও।

Advertisement

এক অধ্যক্ষের প্রশ্ন, সারা বছরই যদি পরীক্ষা থাকে, ক্লাস হবে কখন? তাই কোথাও পাঠ্যক্রম শেষ হয় না। কলেজের ক্লাসেই যে-পড়াটা সেরে ফেলা উচিত, সেটা হচ্ছে না। ফলে পরীক্ষায় পাশ নম্বরটুকুও তোলা যাচ্ছে না। ‘‘অনেক সময়ে তো মনে হয়, কলেজগুলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে! ভর্তি হলে এক সময়ে পড়ুয়ারা ডিগ্রি পাবেন। তার জন্য নিয়মিত পঠনপাঠনের প্রয়োজনই নেই,’’ বলছেন, চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, অনেক পড়ুয়াই কলেজের ভরসায় না-থেকে পুরোপুরি প্রাইভেট টিউশনের উপরে নির্ভরশীল।

পুরনো নিয়মে অনার্সের কোনও পরীক্ষার্থী জেনারেলের দু’টি বিষয়ের একটিতেও পাশ না-করলেও তাঁকে পরের স্তরে তুলে দেওয়া হত। পরে সাপ্লিমেন্টারি দিতে হত তাঁদের। জেনারেলের পরীক্ষার্থী তিনটির মধ্যে একটি বিষয়ে পাশ করলেই তাঁকে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষার যোগ্য ধরে নেওয়া হত। পরে সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে পাশ করতে হত তাঁকেও।

২০১৬ সালে নিয়ম বদলের পরে এখন অনার্সের পড়ুয়াকে জেনারেলের দু’টি বিষয়ের যে-কোনও একটিতে পাশ করতেই হবে। পরে সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে পাশ করতে হবে অন্যটিতে। আর জেনারেলের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের মধ্যে দু’টি বিষয়ে পাশ করা বাধ্যতামূলক। অধ্যক্ষদের বক্তব্য, এর ফলে সাপ্লিমেন্টারি দেওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা কমলেও নিয়ম মেনে প্রতিটি বিষয়েই সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর কলেজে কোনও পরীক্ষা হলেই তো ক্লাস বন্ধ!

ঠিকমতো ক্লাস না-হওয়ায় টেস্টে কড়াকড়ি করে অশান্তি বাড়াতে চান না অধ্যক্ষদের অনেকেই। তাই টেস্টে সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়াটা অনেক কলেজে কার্যত অলিখিত নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া নম্বরের তুলনায় কম নম্বর ধার্য করে সকলের পাশের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজেই এটা হয় বলে স্বীকার করলেন অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত। তিনি জানান, এর পরেও টেস্টে অকৃতকার্য হলে আটকানো হয়। অশান্তি হয়। ছাত্র-বিক্ষোভ হয়।

এর জন্য অধ্যক্ষেরা পুরোপুরি পড়ুয়াদের দায়ী করতে রাজি নন। এক ‘‘পুরো ক্লাস করার সুযোগই যাঁদের দিতে পারি না, তাঁদের ফেল করাব কোন মুখে,’’ প্রশ্ন এক অধ্যক্ষের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement