Dengue

পরিষেবা নেই, তাই কি রেফার

রেফারের পিছনে স্বাস্থ্য দফতর চিকিৎসকদের ফাঁকিবাজি না খুঁজে নিজেদের গলদগুলো পূরণ করুক, দাবি তুলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, অসুস্থদের বাঁচানোর পরিষেবা নেই বুঝেই তাঁরা রেফার করছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:৩৮
Share:

জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য জ্বর ও ডেঙ্গি আক্রান্তরা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে আসছেন। অনেকেই আসার পথে বা হাসপাতালের লাইনে মারা যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে রাজ্য সরকার যখন চিকিৎসা পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিচ্ছে, তখন এই কলকাতা-নির্ভরতা কেন?

Advertisement

রেফারের পিছনে স্বাস্থ্য দফতর চিকিৎসকদের ফাঁকিবাজি না খুঁজে নিজেদের গলদগুলো পূরণ করুক, দাবি তুলছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, অসুস্থদের বাঁচানোর পরিষেবা নেই বুঝেই তাঁরা রেফার করছেন। কিন্তু রোগী রাস্তায় মারা গেলে স্বাস্থ্য ভবন থেকে রোগীর পরিবার, ক্লাব থেকে নেতা, সকলেই দুষছেন ডাক্তারকে।

ক’দিন আগে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’-এর কাছে এই অবস্থার কথাই লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ছোট জাগুলিয়া ব্লক প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারের এক মেডিক্যাল অফিসার ইন্দিরা রায় মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ২৪ অক্টোবর বছর ৪৫-এর এক মহিলা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসেন। রক্তের নমুনা বারাসত হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন সকাল ৮টায় মহিলা ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হন। সে দিন আউটডোরে ইন্দিরাদেবী ও আর এক চিকিৎসক ছিলেন। ৭০০-৮০০ রোগীকে সামলাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছিলেন। সন্ধে ছ’টার সময়ে তিনি ইমার্জেন্সিতে এসে ওই মহিলাকে পরীক্ষা করেন। অবস্থা খারাপ বুঝে তাঁকে রেফার করে দেন। রাস্তায় রোগীর মৃত্যু হয়।

Advertisement

ক্ষুব্ধ: চিকিৎসকের পোস্ট।

ওই দিন রাতেই একশো-দেড়শো লোক এসে ইন্দিরাদেবীকে হুমকি দেন এবং তাঁর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে অশ্লীল মন্তব্য করে। ইন্দিরাদেবীর অভিযোগ, স্থানীয় ক্লাব ও রাজনৈতিক নেতারাও তাঁকে শাসিয়ে যাচ্ছে। ইন্দিরাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন আমরা দায় এড়াতে রোগীকে রেফার করি, তা হলে কাজের পরিস্থিতিটা এসে দেখে যান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওপিডি-তে শ’য়ে শ’য়ে রোগী দেখছি। আর দৌড়ে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে রোগী দেখে আসছি। মাত্র দু’জন মেডিক্যাল অফিসার। বাকি চার জন মেডিক্যাল অফিসার ওয়ার্ডে ভর্তি কাতারে কাতারে রোগী সামলাচ্ছেন। এই অবস্থায় ইমার্জেন্সিতে আসা গুরুতর অসুস্থ জ্বরের রোগীকে আলাদা নজর দেওয়া সম্ভব?’’ তিনি জানান, ছোট জাগুলিয়া-সহ আশপাশের কোনও সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গির পরীক্ষা বা রোগীর প্লেটলেট, পিসিভি পরীক্ষা হয় না। নমুনা পাঠাতে হয় বারাসত হাসপাতালে। এক সপ্তাহ পরে রিপোর্ট আসে। তা হলে চিকিৎসক কী ভাবে বুঝবেন রোগীর প্লেটলেট কমছে বা পিসিভি বাড়ছে কি না? এই হাসপাতালে ২০ টাকায় প্লেটলেট পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তা বন্ধ হতে বসেছে বলে অভিযোগ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা রাঘবেশ মজুমদার বলেন, ‘‘আমার কিছু বলার নেই।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, ‘‘সমস্যা হলে জেলার চিকিৎসরা আমাদের জানান।’’

বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়শন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টরস’-এর গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার পরিকাঠামো দেবে না, ডাক্তার দেবে না। এই ভাবে কি ডেঙ্গির মোকাবিলা হয়!’’ ডক্টরস ফোরামের রেজাউল করিমের প্রশ্ন, ‘‘অন্য জেলা থেকে মেডিক্যাল অফিসার তুলে এনে উত্তর ২৪ পরগনার রোগীদের পরিষেবা দেওয়ানো হচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্যকর্তাদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল সম্পর্কে জ্ঞান নেই এমন লোকেদের দফতরের মাথায় বসালে পরিস্থিতি এমনই হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement