দুর্গাপুরে দাদাগিরি, কাঠগড়ায় তৃণমূল

রাস্তা তৈরির টাকার ভাগ না পেয়ে এক ঠিকাদারকে মারধর ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। হিরা বাউরি নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরি-গুন্ডামির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। কিছু দিন আগে এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় গোলমাল করে তিনি গ্রেফতারও হন। যেমন নতুন নয় আসানসোল ও দুর্গাপুর খনি-শিল্পাঞ্চলে শাসকদলের তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো বা গা-জোয়ারির অভিযোগ। দুর্গাপুরে জয় বালাজি থেকে জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল— জুলুমে জড়িয়েছে একের পর এক নেতার নাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

ঠিকাদারকে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর হিরা বাউরি। (ডান দিকে) আহত ঠিকাদার তারকনাথ বাগদি। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। ছবি: ফাইল চিত্র ও বিকাশ মশান।

রাস্তা তৈরির টাকার ভাগ না পেয়ে এক ঠিকাদারকে মারধর ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

Advertisement

হিরা বাউরি নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরি-গুন্ডামির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। কিছু দিন আগে এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় গোলমাল করে তিনি গ্রেফতারও হন।

যেমন নতুন নয় আসানসোল ও দুর্গাপুর খনি-শিল্পাঞ্চলে শাসকদলের তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চালানো বা গা-জোয়ারির অভিযোগ। দুর্গাপুরে জয় বালাজি থেকে জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল— জুলুমে জড়িয়েছে একের পর এক নেতার নাম।

Advertisement

বৃহস্পতিবারই শিল্পাঞ্চলের অন্য প্রান্তে, আসানসোলের সালানপুরে নিয়োগের দাবিতে একটি খনিতে কাজ বন্ধ করিয়ে দেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, বছর দেড়েক আগে বন্ধ হওয়া একটি খনিতে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের সকলকে প্রকল্পে কাজে নিতে হবে। বরাত পাওয়া ঠিকাদার তা মানতে না চাওয়ায় কাজ আটকে দেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপুরে গণ্ডগোল বেধেছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) তহবিল থেকে রাস্তা তৈরির টাকার বখরা চাওয়া নিয়ে। সূত্রের খবর, হ্যানিম্যান সরণি সম্প্রসারণের এক অংশের বরাত পেয়েছেন তারকনাথ বাগদি নামে এক ঠিকাদার। হিরা বাউরি যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেই ৩৩ নম্বরেই এখন কাজ চলছে। তারকবাবুর আত্মীয় তথা কাজের সুপারভাইজার সৈকত মণ্ডল ফরিদপুর ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন, বুধবার কাউন্সিলর এসে শ্রমিকদের উপরে হম্বিতম্বি করেন। তার পরে তারকবাবুর উপরে চড়াও হন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাজের জন্য বরাদ্দের দশ শতাংশ তাঁকে দিতে হবে বলে কাউন্সিলর দাবি করেন। তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানোর পরেই মারধর করে তাঁরা চলে যান।’’ দুর্গাপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তারকবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমায় সপরিবার খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

হিরা বাউরির দাবি, ‘‘ওখানে পুকুরের ঘাট বাঁধানোর কাজ করছে ওই ঠিকাদার। সেখানে কয়েক জনের সঙ্গে বুধবার ওদের গোলমাল হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমি গিয়ে সরিয়ে দিই। এখন আমারই বদনাম হচ্ছে।’’ কখনও মাল্টিপ্লেক্সে জোর করে সিনেমা বন্ধ করা, পারিবারিক বিবাদ মেটাতে পার্টি অফিসে ডেকে মহিলাকে মারধর, রাতে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ঢুকে একটি সংস্থার কর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর— গত তিন বছরে অনেক অভিযোগই উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি তথা শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, হিরা বাউরির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ওঠায় তাঁকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে। দলের তরফে তদন্তও হবে। এই ‘তদন্ত’ বা ‘শাস্তি’ ঘোষণা এবং তার পরে সব যে-কে-সেই হয়ে যাওয়াও তৃণমূলে নতুন নয়।

বছর দুয়েক আগে জয় বালাজির কারখানায় অশান্তি পাকানোয় অসীম প্রামাণিক নামে এক নেতাকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। কিন্তু তাও দলের নানা কর্মসূচিতে দেখা যায় তাঁকে। তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা খোকন দাসকে। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর কর্মিসভায় তিনি হাজির ছিলেন।

তবে কি ‘শো-কজ’ বা ‘বহিষ্কার’ এই সবই আসলে লোক-দেখানো? অপূর্ববাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘নিজের আচরণ বদলানোর সুযোগ সবাইকেই দেওয়া হয়। কিন্তু দল সবার উপরে কড়া নজর রাখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন