তালাকের প্রতিবাদ, বধূকে খুনের অভিযোগ

এ দিন শ্বশুরবাড়ির কাছেই একটি আমবাগানে ওই গৃহবধূর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

তালাকের প্রতিবাদ করায় এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজনা ছড়াল রায়গঞ্জ থানার গৌরি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম নুরবানু খাতুন (২৬)।

Advertisement

এ দিন শ্বশুরবাড়ির কাছেই একটি আমবাগানে ওই গৃহবধূর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। এর পর রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মৃতার গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন মিলেছে। পাশাপাশি, তাঁর হাত-পা, পিঠ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ওই গৃহবধূর মৃতদেহটি উদ্ধার হতেই তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা উধাও হয়ে গিয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘মৃতার বাপের বাড়ির লোকেরা এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

পরিবার সূত্রে খবর, নুরবানু তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নুরবানুর স্বামী সুন্দরলাল আলি পেশায় চাষি। চার বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। নুরবানুর বাপের বাড়ি ইটাহার থানার সুরুণ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজিতপুর এলাকায়। মৃতার কাকা মহম্মদ সলিমুদ্দিনের অভিযোগ, বিয়ের এক বছর পর থেকে সুন্দরলাল ছাড়াও তাঁর পরিবারের লোকেরা বাপের বাড়ি থেকে কখনও টাকা, আবার কখনও চাল-ডাল ও আনাজ চেয়ে নুরবানুর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। কিন্তু নুরবানু আনতে অস্বীকার করায় অভিযুক্তেরা তাঁকে মাঝেমধ্যেই মারধর করতেন। সলিমুদ্দিনের আরও অভিযোগ, নুরবানুর উপর অত্যাচার রুখতে গত দু’বছরে তাঁরা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে একাধিক বার কখনও পাঁচ হাজার, কখনও ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।

Advertisement

নুরবানুর বাবা মহম্মদ আবিরুদ্দিনের অভিযোগ, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ফের টাকা চেয়ে নুরবানুকে মারধর করেন। কিন্তু তাঁর মেয়ে টাকা আনতে অস্বীকার করায় সুন্দরলাল তাঁকে সর্বসমক্ষে এক তালাক দিয়ে সতর্ক করেন। নুরবানু ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাড়িতে বিষয়টি জানান। আবিরুদ্দিন জানান, তাঁরা নুরবানুর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সুন্দরলালকে তালাক না দেওয়ার অনুরোধ করেন। এলাকার বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে এক সালিশি সভায় নুরবানুকে তালাক না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সুন্দরলাল। আবিরুদ্দিন বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এক তালাকের প্রতিবাদ করেছিল। তাই সুন্দরলাল ও তাঁর পরিবারের লোকেরা আমার মেয়েকে মারধর করে গলা টিপে খুন করেছে। পরে প্রমাণ লোপাট করতে দেহটি আমবাগানে ফেলে দেয়।’’ তিনি জানান, তিনি নুরবানুর স্বামী সুন্দরলাল, শ্বশুর সামাদ আলি, শাশুড়ি মতিলাল বিবি, জা আয়েশা বিবি, ভাসুর মহম্মদ হাসিবুর ও দেওর মহম্মদ সইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন