এক শহরে দুই সংসার পেতেছিল মনোতোষ!

কখনও মনোতোষ দে তো কখনও শ্যামল দে সরকার। আবার মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে ঘর করত জিয়ারুল গাজি নামে। দুই বাড়ি থেকেই উধাও হয়ে যেত মাঝে মধ্যে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:২৭
Share:

মনোতোষ দে।

একই শহরে দুই বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে দেড় কিলোমিটার। সেখানেই দুই ‘স্ত্রী’কে নিয়ে দিব্যি দু’টো সংসার পেতে বসেছিল মনোতোষ দে। দুই মহিলারই দাবি, তারা কেউ ‘সতীন’-এর খবর পায়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার কলকাতা স্টেশন থেকে অস্ত্র কারবারি মনোতোষকে গ্রেফতার করে এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, বসিরহাটের ওই এলাকায় আরও অন্তত খানপাঁচেক বাড়ি নানা সময়ে ভাড়ায় নিয়ে থেকেছে মনোতোষ। পাঁচ-সাত কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কয়েক বছরে একাধিক বার বাসা বদল করেছে সে। নামও বদলেছে বহুবার। কখনও মনোতোষ দে তো কখনও শ্যামল দে সরকার। আবার মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে ঘর করত জিয়ারুল গাজি নামে। দুই বাড়ি থেকেই উধাও হয়ে যেত মাঝে মধ্যে।

মনোতোষের সঙ্গেই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। মনোতোষ তাদের অস্ত্র বিক্রি করতে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। বুধবার ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘মনোতোষের ভারত বা বাংলাদেশে থাকার কোনও বৈধ পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। তাকে আগেও একাধিকবার পুলিশ ধরেছে। অশোকনগর থানার পুলিশ অস্ত্র পাচারের অভিযোগেও ধরেছিল।’’ গোয়েন্দারা জানান, বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র এনে সরবরাহ করত মনোতোষ। গত ছ’মাসে বাংলাদেশে ৪-৫ বার অস্ত্র সরবরাহ করেছে সে।

Advertisement

মঙ্গলবারই বসিরহাটের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৈত্রবাগানে মনোতোষের একটি বাড়ির হদিস মেলে। সেখানে সবিতা দে ও গৌরী দে নামে দুই মহিলার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। মনোতোষ এখানে থাকত শ্যামল দে সরকার নামে। গৌরীকে স্ত্রী ও সবিতাদেবীকে নিজের শাশুড়ি বলে পরিচয় দিয়েছিল।

এ দিন জানা যায়, মনোতোষের আরও এক স্ত্রী আছে। যিনি থাকেন বসিরহাটের রঘুনাথপুর দক্ষিণপাড়ায়। আফরোজা মোল্লা নামে ওই মহিলার সঙ্গে মনোতোষ থাকত জিয়ারুল গাজি নামে। আফরোজা বলেন, ‘‘আগে ডিফেন্সে কাজ করতেন বলে জানিয়েছিলেন স্বামী। পরে মাছের কারবার করতেন বলেই জানতাম।’’

সবিতা এবং গৌরী এ দিন লালবাজারে যান। গৌরী জানান, তাঁর স্বামী শ্যামল দে একসঙ্গে থাকেন না। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। শ্যামলের নাম ভাঁড়িয়েই মনোতোষ তাঁর সঙ্গে থাকছিলেন। তদন্তকারীদের কাছে গৌরী দাবি করেছেন, মনোতোষ সম্পর্কে তাঁর কাকা।

আরও পড়ুন: ৫ গুলি, ভদ্রেশ্বরে খুন পুরপ্রধান

বসিরহাটে যে সব জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছিল মনোতোষ, সেখানে গিয়ে জানা গেল, ‘সজ্জন’ মানুষ বলেই পরিচিতি ছিল তার। দান-ধ্যানও কম নয়। পাড়ার ক্লাবে বিশ-তিরিশ হাজার টাকা দেওয়া, প্রতিমা তৈরির টাকা দেওয়া— যে এলাকায় গিয়েছে, সেখানেই এ ভাবে লোকজনকে হাত করে ফেলত মনোতোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন