চিন্তিত: বাড়িতে জাকির বল্লুকের মেয়ে করিমা। বুধবার আমডাঙার বইচগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে অশান্তির পরে পেরিয়ে গেল চারটি মাস। তবু গ্রামবাসীর আতঙ্ক গেল না!
মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করে সিপিএম অভিযোগ তোলে, আমডাঙায় তাদের বহু সমর্থক গ্রামে ফিরতে পারছেন না। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। বুধবার গ্রামবাসীরা জানান, অনেক সিপিএম সমর্থক ফিরতে পারছেন না ঠিকই, আবার ফিরেছেনও অনেকেই। যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের দাবি, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোতে পারছি না। ভয় করছে।”
তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের পাল্টা প্রশ্ন, “ভয়ের কী আছে! আমরাই তো ওঁদের গ্রামে ফিরিয়েছি।থাক না ওঁরা। কোনও ঝামেলায় না-জড়ালেই হল।” আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমানের দাবি, “এলাকা স্বাভাবিক। যাঁদের নামে মামলা রয়েছে, তাঁরা ছাড়া কেউ গ্রামের বাইরে নেই।”
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে গত অগস্টে শাসক-বিরোধী লড়াইয়ে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল আমডাঙার বইচগাছি, বড়গাছিয়া, রতনপুর এবং টেঙাটেঙি গ্রাম। প্রাণ যায় দুই তৃণমূল কর্মীর। সেই ঘটনায় আপাতত জেলে সিপিএমের ডাকসাইটে নেতা জাকির বল্লুক। এত দিনে আমডাঙা ব্লকের আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতে বোর্ড গঠন হয়েছে। মরিচা, তারাবেড়িয়া এবং বোদাই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন এখনও করা যায়নি। আসন সংখ্যায় এই তিনটি পঞ্চায়েতেই তৃণমূল সংখ্যালঘু। বিধায়ক জানান, ওই তিনটি বোর্ড গড়া নিয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। গোলমালের জেরে বড়গাছিয়ার হাই-মাদ্রাসা এবং প্রাথমিক মাদ্রাসা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। মাসখনেক আগে ফের চালু হয়েছে।
বইচগাছির বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, তাঁদের শিরদাঁড়ায় হিমস্রোতের আনাগোনা এখনও চলছে। বইচগাছিতে জাকিরের বাড়ির আশপাশেও কয়েক ঘর সিপিএম সমর্থকের বাস। জাকিরের ছেলে শামিম আখতার এখনও গ্রামছাড়া। মেয়ে করিমা মাধ্যমিক দেবে। সে জানায়, স্কুলে যাওয়ার পথে কেউ কিছু বলে না। তবে, বাঁকা চোখের অনেক চাহনিই ভয় ধরায়। ফলে, সন্ধ্যার পরে সে গৃহবন্দি হয়েই থাকে।
জাকিরের পড়শি ষাটোর্ধ্ব ইসরাইল বল্লুকও গ্রামছাড়া ছিলেন। রাস্তার ধারে তাঁর চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকান ভাঙচুর হয়েছিল। তিনি বলেন, “দিন পনেরো হল ফিরছি। তা-ও শুধু দিনের বেলা। বিকেলে পালাই।’’ ইসরাইলের পড়শি বাড়ির জনাচারেক কিশোর জানায়, রাতে তারা ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারে না। কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থাকে।
ঘরছাড়াদের নিয়ে বুধবার মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয় সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। পঞ্চায়েতে সিপিএমের জয়ী ও সন্ত্রাসের ফলে ঘরছাড়া দুই প্রার্থী ছাবিলা বিবি এবং হামিদা বিবি বুধবার কমিশনে অভিযোগ জমা দেন। সন্ত্রাসের বিবরণের পাশাপাশি ঘরছাড়াদের তালিকাও জমা দিয়ে কমিশনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা।