অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজো উদ্বোধন করতে বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায়
পৌঁছোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় বদল হল
তাঁর সফরসূচিতে। সর্বশেষ সূচি অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে তিনটি নয়, দু’টি পুজোর
উদ্বোধন করবেন শাহ। তবে তার ফাঁকে ছুঁয়ে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র। কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন তিনি। এর আগে পর্যন্ত
যে সরকারি সফরসূচি পাওয়া যাচ্ছিল, তাতে দক্ষিণ কলকাতার লেক অ্যাভনিউয়ের সেবক
সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা লেখা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে
পাঁচটা নাগাদ জানা গিয়েছে, শাহ দক্ষিণ কলকাতার সেবক সঙ্ঘের পুজোয় যাবেন না।
পুজোর উদ্বোধনে বেরনোর আগে অবশ্য শাহ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নিউটাউনের যে হোটেলে থাকছেন, শুক্রবার সকালে সেখানেই বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠক হবে বলে দলের রাজ্য মিডিয়া সেল জানিয়েছে। শাহ নিজে বৈঠক করবেন, এমন কিছু সে বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়নি। কিন্তু প্রথম সারির এক রাজ্য নেতার যে কর্মসূচি জানানো হয়েছে, তাতে সকাল ১০টায় নিউটাউনের হোটেলে সাংগঠনিক বৈঠকের কথা লেখা রয়েছে। বলাই বাহুল্য, শুক্রবার সকাল ১০টায় ওই হোটেলে বৈঠকের অর্থ হল, শাহই রাজ্য নেতাদের নিয়ে বসবেন। তার পরে উদ্বোধন করতে বেরোবেন। তবে বৈঠক দীর্ঘ হবে না। কারণ, রাজ্য বিজেপির দেওয়া আর এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে শাহের পৌঁছনোর কথা।
মাসখানেক আগে স্থির হয়েছিল, ২০২৩ সালের মতো এ বারেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে আসবেন। তবে তখন জানা গিয়েছিল, তিনি দু’টি পুজোর উদ্বোধন করবেন। একটি উত্তর কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, যার উদ্যোক্তা বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। অন্যটি বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজ়েডসিসি) ‘পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতি মঞ্চ’ (বকলমে রাজ্য বিজেপির সাংস্কৃতিক সেল) আয়োজিত পুজো। যার উদ্যোক্তা রুদ্রনীল ঘোষ, দীপ্তিমান বসুদের মতো বিজেপি নেতারা এবং নেপথ্যে জিষ্ণু বসু, নারায়ণ চক্রবর্তীদের আরএসএস বা তার সহযোগী সংগঠনের পদাধিকারীরা। সপ্তাহখানেক আগে জানা যায়, দক্ষিণ কলকাতার সেবক সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধনেও শাহ যাবেন।
শাহের প্রস্তাবিত সফরসূচিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বার বার নানা বদল হয়েছে। বুধবারই শোনা গিয়েছিল, দক্ষিণ কলকাতার পুজো মণ্ডপটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন না। তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব জানান, তাঁদের কাছে তেমন কোনও খবর নেই। এর পরে রটে যায়, ইজ়েডসিসি-র পুজোয় শাহ যাবেন না। সূত্রের দাবি, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশই ইজ়েডসিসি-র পুজো উদ্যোক্তাদের সে কথা জানান। কিন্তু তার পরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের দফায় দফায় কথা হয়। তখন শাহের ওই পুজোতে যাওয়ার নিশ্চয়তা মেলে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার তরফেও উদ্যোক্তাদের তা জানিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
তার পরেও সফরসূচিতে বদল হয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত পুজো উদ্যোক্তারা এবং রাজ্য বিজেপির কাছে খবর ছিল, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ নাগাদ কলকাতায় নামবেন শাহ। রাতে থাকবেন নিউটাউনের হোটেলে। সেখান থেকে শুক্রবার সকাল ১১টায় বেরিয়ে শাহ ১১টা ২০ নাগাদ পৌঁছবেন দক্ষিণ কলকাতার সেবক সঙ্ঘে। ফিতে কাটা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সংবর্ধনা এবং ভাষণ (শাহের ইচ্ছা হলে) শেষ হবে আধঘণ্টার মধ্যে। ১১টা ৫০ নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে ১২টায় ঢুকবেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে। সেখানেও আধ ঘণ্টার কর্মসূচি। তার পরে আবার হোটেল। মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম সেরে দুপুর ২টো ৫৫ নাগাদ আবার হোটেল থেকে যাবেন ইজ়েডসিসি। সেখানেও বরাদ্দ আধ ঘণ্টাই। তার পরে বিমানবন্দর।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে জানা যায়, সময়সূচি আবার বদলে গিয়েছে। শুক্রবার বেলা ১২টা বা সাড়ে ১২টার মধ্যেই শাহ যাবতীয় উদ্বোধন সেরে ফেলবেন এবং দক্ষিণ কলকাতার সেবক সঙ্ঘে যাবেন না। তার বদলে যাবেন কালীঘাট মন্দিরে।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে পৌঁছবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। সেখানে ফিতে কাটার পরে প্রতিমার উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করবেন এবং প্রদীপ জ্বালাবেন। তার পরে যাবেন অনুষ্ঠান মঞ্চে। সেখানে উত্তরীয় এবং স্মারক দিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হবে। সংক্ষিপ্ত ভাষণে শাহকে স্বাগত জানাবেন পুজো কমিটির সভাপতি। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ১০ মিনিটের মধ্যে। তার পরেই শাহের হাতে মাইক তুলে দেওয়া হবে। মোট ১৫-২০ মিনিট সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে কাটিয়ে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শাহ পৌঁছবেন কালীঘাট মন্দিরে। সেখানে পুজো দিয়ে সরাসরি যাবে বিধাননগর। ১২টা ৫ মিনিটে ইজ়েডসিসিতে পৌঁছোবেন। সেখানেও কর্মসূচি প্রায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের মতোই। শুধু সে সবের মাঝে পাঁচ মিনিটের একটি নৃত্যানুষ্ঠান থাকবে। আর ভাষণ দিতে চাইলে শুধু শাহই দেবেন, অন্য কেউ নন। সাড়ে ১২টার মধ্যে রওনা দেবেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে।
এই সফরে রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে শাহ কোনও বৈঠক করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার শাহের সঙ্গেই থাকবেন।