অমিত শাহ
গত এপ্রিলে বঙ্গ সফরে এসে দরিদ্র এবং নিম্নবর্গের বাড়িতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। যাঁদের অনেকেই কস্মিনকালেও বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সে সময় নকশালবাড়ির যে দম্পতির বাড়িতে তিনি মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন, তাঁদের ভাঙিয়েও নিয়েছিল তৃণমূল। সেই ঘটনায় মুখ পুড়েছিল বিজেপির। এ বারের সফরে অমিত তিন দিনই কলকাতায় থাকবেন। তবে বাদ যাচ্ছে না ভোজন-রাজনীতি। ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে দলের শহিদ পরিবার ও আক্রান্ত কর্মীদের পরিজনদের সঙ্গে মধ্যাহ্ণভোজ সারবেন বিজেপি সভাপতি। শুনবেন তাঁদের লড়াইয়ের কথা।
আগামী সোমবার অমিতের তিন দিনের কলকাতা প্রবাস শুরু হচ্ছে। অমিতের ব্যস্ত সফরসূচির মধ্যেও এই সাক্ষাৎকার এবং ভোজনের জন্য সময় বরাদ্দ করা হয়েছে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। বিজেপি সূত্রের খবর, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কোচবিহারের দিনহাটা, নদিয়ার চাকদহ, মালদহের কালিয়াচক, কৃষ্ণনগরের নদিয়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ৬০-৭০ জনকে ওই দিন অমিতের সঙ্গে দেখা করাতে আনা হবে। যে সব দলীয় কর্মী সাম্প্রতিক কালে তৃণমূলের হাতে আহত হয়েছেন, তাঁরা এবং যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের লোকেরা ওই তালিকায় রয়েছেন। যেমন— রায়গঞ্জের অরেন সিংহ, কালিয়াচকের রামচন্দ্র ঘোষের পরিজনদের ওই দিন আনা হবে কলকাতায়।
বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, এ রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দান অন্য রাজ্যের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে বিরোধী পরিসরে রাজনীতি করার অর্থ—প্রতিনিয়ত শাসক তৃণমূলের হাতে মার খাওয়া। এই পরিস্থিতিতে যুঝতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের মনোবল যাতে ভেঙে না যায়, তার জন্যই আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করবেন অমিত। আশ্বাস দেবেন পাশে থাকার। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ অবশ্য অমিতের এই কর্মসূচির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রণকৌশলই দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তৃণমূল কর্মীদের তৎকালীন শাসক সিপিএমের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ পেলেই, সেই পরিবারকে কলকাতায় দলের মঞ্চে নিয়ে আসতেন মমতা। যাতে প্রচার মাধ্যমের আলোয় এনে তৎকালীন সিপিএমের ‘নৈরাজ্যের’ কথা তুলে ধরা যায়। বিজেপিও সেই কৌশলই নিচ্ছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য। এ বার অবশ্য লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। এই ঘটনায় একদিকে যেমন রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার কথা তুলে ধরা যাবে তেমনই শাসক দলের মারকুটে চেহারাও বেআব্রু করা যাবে বলে বিজেপির একাংশের দাবি।
সফরের বাকি তিন দিন বিজেপি সভাপতি ২২টি বৈঠক বা অনুষ্ঠানে যাবেন। তার মধ্যে দলের জেলা সভাপতি সঙ্গে যেমন বৈঠক হবে, তেমনই সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গেও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। শহরের এক বণিকসভাতেও তাঁর যাওয়ার কথা রয়েছে। যদিও রাজ্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় যে কর্মিসভায় বিজেপি সভাপতির ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।