West Bengal Assembly Election 2021

নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে ২৯৪ কেন্দ্রের প্রার্থীই নিজে বাছবেন শাহ

প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত হবে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ নেতার রিপোর্টের ভিত্তিতে। গত লোকসভা নির্বাচনেও এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১১:২৮
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্য বিজেপির উপরে নির্ভরতা নয়। পাহাড় থেকে সাগর— বাংলার সব বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী নিজে হাতে বাছবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবং সেই প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত হবে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ নেতার রিপোর্টের ভিত্তিতে। গত লোকসভা নির্বাচনেও এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। অমিত নিজে বাংলার প্রার্থী বাছাই করেছিলেন। তাতে ফলও পেয়েছিল বিজেপি। ১৮টি আসনে জয় বাংলায় বিজেপি-র অভূতপূর্ব সাফল্য হিসেবেই পরিগণিত হয়েছিল। তা ছাড়াও কয়েকটি আসনে হারের ব্যবধান ছিল খুবই কম। এ বার‌ বিধানসভা নির্বাচনেও সেই ‘পরীক্ষিত’ পথেই হাঁটতে চাইছেন অমিত।

Advertisement

দলের অন্দরে উপদলীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিধানসভা ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপি-র রাশ নিজেদের হাতে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে বিষয়ে তাঁরা যে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা প্রার্থী বাছাইয়ের এই সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট। নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে রাজ্য বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যাতে কোনও রকমের বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। সেই কারণেই বাংলাকে পাঁচ ভাগে ভেঙে তাঁর ‘আস্থাভাজন’ ভিনরাজ্যের পাঁচ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত। তাঁদের দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই প্রার্থী বাছবেন অমিত। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনে রাজ্যের সংগঠনে কিছু রদবদলও হতে পারে। আগামী ৮ এবং ৯ ডিসেম্বর রাজ্যে থাকবেন বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। সেই সময়েই রাজ্য থেকে জেলা স্তরে সম্ভাব্য সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে ।

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের দুই বিবদমান গোষ্ঠীর কাজকর্মে অনেকদিন ধরেই বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। একাধিকবার দিল্লিতে ডেকে দুই শিবিরকেই সতর্ক করা হলেও সব সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। শুধু রাজ্য স্তরেই নয়, অনেক জায়গাতেই পুরনো বিজেপি বনাম নবীন বিজেপি লড়াই এখনও রয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অমিত তাঁর আস্থাভাজন পাঁচ ভিনরাজ্যের নেতা সুনীল দেওধর, দুষ্যন্ত গৌতম, বিনোদ তাওড়ে, বিনোদ সোনকর এবং হরিশ দ্বিবেদীকে পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: মন্ত্রিত্বে ইস্তফার পর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিধায়ক পদ ছেড়ে নিতে চান শুভেন্দু

রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রকে আলাদা আলাদা ‘সাংগঠনিক জেলা’ হিসেবে বিচার করে বঙ্গ বিজেপি। সেই অনুযায়ী মোট পাঁচটি ভাগে ভাঙা হয়েছে গোটা রাজ্যকে। দুই মেদিনীপুর ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও হুগলি জেলার আসনগুলি নিয়ে তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর জোন। দায়িত্বে সুনীল দেওধর। কলকাতা, সম্পূর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার দমদম লোকসভা এলাকা নিয়ে তৈরি কলকাতা জোনের দায়িত্বে দুষ্যন্ত গৌতম। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাকি অংশ নিয়ে তৈরি নবদ্বীপ জোনের দায়িত্বে বিনোদ তাওড়ে। দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলা নিয়ে তৈরি রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্বে বিনোদ সোনকর। পঞ্চম জোন উত্তরবঙ্গ। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গের সব জেলা। এই জোনের দায়িত্বে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক হরিশ দ্বিবেদী। ইতিমধ্যেই প্রথম চারটি জোনে এসে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক করে গিয়েছেন। তাঁরা রিপোর্ট তৈরি করে অমিতকে জমা দিয়েছেন বলেও খবর। তবে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত হরিশ এখনও রাজ্যে আসেননি। তাঁর বদলে উত্তরবঙ্গ জোনের রিপোর্ট পাঠিয়েছেন সদ্য রাজ্যে সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় আই টি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, ব্যক্তিগত সমস্যায় হরিশ এখনও রাজ্যে আসতে পারেনি। শোনা যাচ্ছে, তাঁর জায়গায় আপাতত কাজ সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে সদ্য বিহারের সহকারী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া উত্তরপ্রদেশের নেতা রত্নাকরকে।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলে বরাবরই নিজের ‘আস্থাভাজন’ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সব কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বিজেপির প্রার্থী বাছাইও একই হাতে থাকছে। এই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, বিজেপি এ বার ক্ষমতায় আসতে পারে ধরে নিয়ে অনেকেই প্রার্থী হতে চাইছেন। সব আসনেই আগ্রহীদের তালিকা বড়। এ ছাড়াও অন্য দল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বা দিতে পারেন, তাঁদের নামও রয়েছে। এত নামের মধ্যে কোথায় কাকে টিকিট দেওয়া ঠিক হবে, তা আসন ধরে ধরে বিচার করা হবে। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক শক্তি যেমন দেখা হবে, তেমনই গুরুত্ব দেওয়া হবে আসন অনুযায়ী স্থানীয় ইস্যু, আবেগ এবং রাজনৈতিক সমীকরণকে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বিজেপিতে পুরনো না নতুন, তা বিবেচনা না করে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা দেখেই প্রার্থী বাছাই হবে। এবং সে বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের সুপারিশও ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। সেই কারণেই নিজের আস্থাভাজন নেতাদের বাংলায় পাঠিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন অমিত। সেই প্রাথমিক রিপোর্ট তাঁর কাছে জমাও পড়েছে।

ওই কেন্দ্রীয় নেতা আরও জানান, অমিতকে রিপোর্ট দেওয়ার আগে শুধু রাজ্য বা জেলা নেতাদের কথার উপরে ভরসা না করে নীচু স্তরের কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। কোন বুথে কতটা শক্তি, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের দেওয়া পরিসংখ্যানের উপরেই শুধু নির্ভর না করে ‘গ্রাউন্ড রিয়েলিটি’ বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে ভোটের আগে ‘খামতি’ দূর করা যায়। ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের নেতারা অনেক সময়েই ছোটখাট কিছু সমস্যাকে সে ভাবে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু সেগুলিও নির্বাচনে সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অতীতের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বাংলায় এই পথ নিয়েছেন অমিত’জি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন