CBI

CBI: ‘বিশিষ্ট’ হিসাবে সংবর্ধনা দেয় স্কুল, সিবিআই নজরে থাকা পিন্টুর উত্থানে অন্য গল্প

আরামবাগের অনেকের কাছে তিনি অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই ‘বিশিষ্ট’। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা, পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি দেখে তাঁর গায়ে ‘প্রভাবশালী’ তকমাও এঁটে দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তাঁকে সিবিআই খুঁজছে, এ কথা জানার পরে সোমবার অবশ্য তাঁর পড়শিরা খুব একটা অবাক হননি।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৬:২২
Share:

পিন্টু মণ্ডলের বাড়ি আরামবাগের পারুল এলাকায়। ইনসেটে পিন্টু মণ্ডলকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

এ তল্লাটে তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছে গত বছরের শেষে। তার পর থেকে নিজের বানানো দোতলা বাড়িতে তাঁকে আর কেউ দেখেননি।

Advertisement

কে জানত, বছর পঞ্চাশের সেই পিন্টু মণ্ডলকে গরু ও কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই খুঁজছে!

আরামবাগ বয়েজ স্কুল মাঠে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৮ দিনের যুব উৎসবের আয়োজন করেছিল আরামবাগ পুরসভা। বিগত বছরগুলির মতো পিন্টুই কলকাতা ও মুম্বইয়ের শিল্পীদের আনার আয়োজন করেছিলেন। ‘বিশিষ্ট মানুষ’ হিসেবে তাঁকে ৩১ ডিসেম্বর মঞ্চে সংবর্ধনাও দিতে দেখা যায় উৎসবের আয়োজকদের।

Advertisement

আরামবাগের অনেকের কাছে তিনি অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই ‘বিশিষ্ট’। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা, পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি দেখে তাঁর গায়ে ‘প্রভাবশালী’ তকমাও এঁটে দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তাঁকে সিবিআই খুঁজছে, এ কথা জানার পরে সোমবার অবশ্য তাঁর পড়শিরা খুব একটা অবাক হননি। অনেকে মনে করছেন, যে গতিতে পিন্টুর উত্থান হয়েছে, তাতে ‘অন্য গল্প’ থাকতেই পারে! সামনে আসছে কিছু অভিযোগও।

৩১ ডিসেম্বর যাঁর হাত থেকে পিন্টু সংবর্ধনা নিয়েছিলেন, তিনি তৎকালীন পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী। তিনি বলেন, “উৎসবে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, সবাইকেই বিভিন্ন দিনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পিন্টুবাবু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত বলে আমাদের জানা ছিল না।”

জন্ম থেকেই গোঘাটের কুমুড়শা গ্রামে মামাবাড়িতে মানুষ পিন্টু। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মামাবাড়ির কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা শুধু জানান, তাঁদের সঙ্গে পিন্টুর দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। কামারপুকুরে পিন্টুর এক আত্মীয় থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘বলতে নিজেরই লজ্জা হচ্ছে, আত্মীয়তা সত্ত্বেও আমার দুই মেয়ের চাকরির জন্য ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছি পিন্টুকে। চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি পিন্টু। শাসক দলের রাজ্য স্তরের নেতাদের সঙ্গে ওঁর দহরম-মহরম আছে বলে দাবি করত। তাই ঘাঁটাইনি।”

পিন্টুর ছেলেবেলার এক সঙ্গী বলেন, “পড়াশোনায় কাঁচা থাকলে কী হবে, বুদ্ধি ধরত পিন্টু। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই পড়াশোনা ছেড়ে কিছুদিন মামাদের সঙ্গে চাষের কাজ করে। সতেরো বছর বয়স নাগাদ সে আরামবাগের কালীপুরে একটি ভুসির দোকান থেকে মাল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আয় শুরু করে। একই সঙ্গে একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত হয়।”

এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি পিন্টুকে। আরামবাগের করুণা মার্কেট সংলগ্ন একটি ঘর ভাড়া নিয়ে হোটেল-ব্যবসা শুরু করেন। পরে ভাইকে হোটলে বসিয়ে বিভিন্ন ক্লাবে যাত্রা বা বিচিত্রানুষ্ঠানে কলাকুশলী আনার কাজ শুরু করেন পিন্টু। মামার বাড়ি ছেড়ে ২০০০ সাল নাগাদ আরামবাগ শহরের কয়েকটি ভাড়া বাড়িতে মা-ভাইকে নিয়ে থাকতেন পিন্টু। বছর দশেক আগে শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পারুলে জায়গা কিনে দোতলা বাড়ি বানান। সেই বাড়িতে অবশ্য তিনি কমদিনই থেকেছেন। সিবিআই বলছে, ২০১১-তে কয়লা ও গরু পাচারের সুলুকসন্ধানের জন্য পিন্টু বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় যাত্রাদলের অফিস খুলেছিলেন।

সোমবার সকালে পিন্টুর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। পড়শিরা জানান, পিন্টুর বৃদ্ধা মা ও ভাই সেখানে বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত থাকতেন। এখন ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়ারাও কয়েকদিন নেই। ওই বাড়িতে মাঝে মাঝে পিন্টু এসে রাত কাটাতেন। পিন্টুর বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসাবে কাজ করা এক যুবক বলেন, “লোকটার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেটা দেখে বোঝা যেত না। মিষ্টি ব্যবহার করতেন। তবে অনেক সময় মজুরি না দিয়ে মদ-মাংস খাইয়ে দিতেন।” চেষ্টা করেও এ দিন পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। এসএমএসেরও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন