অপহৃত শিশু উদ্ধারে একক লড়াই অফিসারের

এক যাত্রায় পৃথক ফল ঠিক কাকে বলে, তা যেন টের পাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

এক যাত্রায় পৃথক ফল ঠিক কাকে বলে, তা যেন টের পাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

গত সপ্তাহে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি আর উদ্ধারের রোমহর্ষক ঘটনার পর থেকে বছর দেড়েক আগের অভিজ্ঞতা তাঁকে তাড়া করছে সমানে। তিনি হরিণঘাটা ব্লক মেডিক্যাল হেল্‌থ অফিসার (বিএমওএইচ) বিদ্যুৎ গায়েন। ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ‘অপহৃত’ একটি শিশুর হদিস পেতে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একা। দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে পিছু হটা তো দূরের কথা, জেদ বেড়েই চলেছে তাঁর।

মেডিক্যালের শিশুটির মতো পরিবার-পরিজন আকুল হয়ে ওঠেনি হরিণঘাটার শিশুটির জন্য। নবজাতক ওই শিশুপুত্র ছিল পরিত্যক্ত। তদন্তে তার খোঁজ মেলেনি বলে আদালতে জানিয়ে দিয়ে সটান হাত তুলে নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন বিদ্যুৎবাবু। বারবার নতুন তদন্তের আর্জি জানাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

শিশুটিকে ২০১৫ সালের ১২ অগস্ট অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে বিদ্যুৎবাবুই মামলা রুজু করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এক বার ‘তদন্ত চাই না’ বলে কোর্টে চিঠি দিলেই মামলা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বাচ্চাটার কী হল, সে কোথাও পাচার হয়ে গেল কি না, সেটা তো জানা যাবে না।’’ তাই তদন্তে খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ কোর্টে জানানোর পরেও ফের তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন তিনি। বিদ্যুৎবাবুর দাবি, ‘‘বাচ্চাটার অপহরণের মামলা তুলে না-নিলে বিপদ হবে বলে আমি এখনও অজানা নম্বর থেকে হুমকি-ফোন পাচ্ছি। অথচ পুলিশ সমানে বলে চলেছে, ওরা কোনও সূত্র পাচ্ছে না।’’ বিদ্যুৎবাবু পুলিশকে বারবার সব জানিয়েছেন। লাভ হয়নি।

কী ঘটেছিল দেড় বছর আগে?

হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রের খবর, সিংহাট অঞ্চলে ২০১৫-র ৩১ জুলাই রাতে ফেলে যাওয়া এক সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে উদ্ধার করে মোহনপুর ফাঁড়ির পুলিশ। নাড়ির কাছে সংক্রমণ হয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কয়েক দিনের মধ্যে এক দল দুষ্কৃতী ওয়ার্ডে ঢুকে অস্ত্র উঁচিয়ে বাচ্চাটিকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। অভিভাবক বলতে শিশুটির কেউ না-থাকায় বিএমওএইচ বিদ্যুৎবাবুই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর সন্দেহ, ওই নবজাতককে অপহরণের পিছনে কোনও সংগঠিত পাচার-চক্রের হাত আছে। কিন্তু পুলিশ নাকি তদন্তে কিছুই পায়নি!

এত বড় ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা থেকে স্থানীয় পুলিশ কারও কোনও রকম তাপ-উত্তাপ নেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘আমায় কেউ কিছু জানায়নি।’’ ঘটনাটির কথা স্বীকার করেও কল্যাণীর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা তাপস রায় নির্বিকার, ‘‘পুলিশ চোরকে ধরতে না-পারলে কী করব?’’ আর কল্যাণী থানার আইসি সুজিত ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্তে বাচ্চাটির হদিস মেলেনি। আপাতত কেস থামিয়ে দরকার পড়লে নতুন করে তদন্ত শুরু করলেই ভাল! কলকাতার হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি আর অস্ত্র দেখিয়ে গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শিশু তুলে নিয়ে যাওয়াটা যে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের চোখে মোটেই এক নয়— হাড়ে হাড়ে সেটা বুঝছেন বিদ্যুৎবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন