স্বরূপের বিরুদ্ধে মমতাকে খোলা চিঠি লকেটদের

টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় জুলুমবাজির জন্য ইতিমধ্যেই স্বরূপ বিশ্বাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার বিরোধী দলের আক্রমণের মুখেও পড়লেন স্বরূপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:১২
Share:

টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় জুলুমবাজির জন্য ইতিমধ্যেই স্বরূপ বিশ্বাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার বিরোধী দলের আক্রমণের মুখেও পড়লেন স্বরূপ। রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক এবং অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় স্বরূপের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এবং সাত দফা প্রশ্ন তুলে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলা চিঠি দিয়েছেন।

Advertisement

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই এবং দক্ষিণ কলকাতার যুব তৃণমূল সভাপতি স্বরূপ টালিগঞ্জে কলাকুশলীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স’-এর সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে স্টুডিও পাড়ায় ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিজেপি-র তরফে লকেট এ দিন অভিযোগ করেন, স্বরূপ ফেডারেশনকে আদতে সিন্ডিকেট হিসাবে ব্যবহার করছেন। তাঁর সিন্ডিকেট রাজের দাপটে টালিগঞ্জের অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কলাকুশলীরা কাজ পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের রিকশা চালাতে বা বাজারে মাছ, পান, সব্জি ইত্যাদি বিক্রি করতে হচ্ছে। আর কলাকুশলীর কাজ পাচ্ছেন স্বরূপের অনুগতরা। যাঁদের অনেকেরই দক্ষতা অভিজ্ঞদের ধারে-কাছেও নয়। লকেটের আরও অভিযোগ, ‘‘স্বরূপ বিশ্বাসের সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে গিল্ড কার্ড পাচ্ছেন না শিল্পী-কলাকুশলীরা। এমনকী, যাঁরা নতুন আসছেন, তাঁদের থেকে ৩০-৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে গিল্ড কার্ড পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে। অথচ, তাঁদের অনেকেই টাকা দিয়েও কার্ড পাচ্ছেন না।’’

টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় ‘স্বরূপতন্ত্র’-এর জেরে বহু প্রযোজকের আর্থিক লোকসান হচ্ছে বলেও লকেটের অভিযোগ। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিদেশে শ্যুটিং করতে যাওয়া মানে বেড়াতে যাওয়া নয়। কিন্তু আজকাল সিন্ডিকেট বলে দেয়, আগের বার অমুক লোক লন্ডন ঘুরে এসেছে। এ বার তমুক লোককে বিদেশ নিয়ে যেতে হবে। এই সব জুলুমে প্রযোজকদের টাকা নষ্ট হয়। সেই জন্য অনেক পরিচালক এবং প্রযোজক টালিগঞ্জকে এড়িয়ে কাজ করতে চাইছেন।’’

Advertisement

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিধাননগরের এক দাপুটে কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে জেলে যেতে হয়েছে। লকেটের কটাক্ষ, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোন পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। টালিগঞ্জের স্বরূপতন্ত্রের অবসান ঘটাতেও কি উনি কারও ফোনের জন্য অপেক্ষা করছেন?’’

বিজেপি-র সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়ক এবং আর এক অভিনেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমরা চাই, টালিগঞ্জে শিল্পী-কলাকুশলীদের সংগঠন রাজনৈতিক রং নিরপেক্ষ হোক। সেখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলে সদস্য হোন। তার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন।’’ গিল্ড কার্ড ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুমন। প্রসঙ্গত, বছর দেড়েক আগে টালিগঞ্জে ফেডারেশনের জুলুমবাজির প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, জর্জ বেকার প্রমুখ। জর্জের নেতৃত্বে বিজেপি একটি সংগঠনও গড়েছিল টালিগঞ্জের অত্যাচারিত কলাকুশলীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। কিন্তু কোনও কিছুতেই স্বরূপের ‘দাদাগিরি’ বন্ধ হয়নি বলে বিজেপি-র অভিযোগ।

লকেটদের অভিযোগ নিয়ে স্বরূপ অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা কী বলেছেন, আগে শুনব। তার পর আমাদের ফেডারেশন জবাব দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন