ভেঙে পড়েছে ব্রিজ। —নিজস্ব সংবাদদাতা
এ রাজ্যে ফের ভেঙে পড়ল ব্রিজ। পোস্তা, শিলিগুড়ির পর এ বার কাকদ্বীপ। নির্মান কাজ চলাকালীণই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল ব্রিজ।
সোমবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপের ঘটনা। কাকদ্বীপের কালনাগিনী নদীর( স্থানীয় ভাবে কালনাগিনী খালে নামে পরিচিত) উপর স্টিমার ঘাটের কাছে ব্রিজটি তৈরি করা হচ্ছিল। এ দিন সকালে আচমকাই ভেঙে করে সেটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ব্রিজটির একটা বড় অংশ ভেঙে পড়ে। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার ঠিক আগেই ভেঙে পড়ে কংক্রিটের সেতুটি। এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতর খবর নেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার পর যদি ভাঙত তা হলে প্রাণহানির সম্ভবনা ছিল।
সেতুটি কাকদ্বীপ ব্লকের রামকৃষ্ণ অঞ্চলের স্টিমার ঘাটের সঙ্গে নরসিংহ আশ্রমকে সংযুক্ত করেছে। তিন বছর আগে এই সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। গত দু’বছর ধরে ১২০ মিটার লম্বা ওই সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। অর্ধেকের মত কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: আদিবাসীদের রেল অবরোধ, সকাল থেকে বির্পযস্ত দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় ট্রেন চলাচল
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নির্মাণ কাজ চলাকালীনই কয়েকদিন আগে ব্রিজটিতে ফাটল ধরা পড়েছিল। প্রশাসনকে সে কথা জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ নিম্ন মানের মালপত্র ব্য়বহারের অভিযোগ তুলেছেন।
যদিও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার দাবি, নির্মানের দায়িত্বে থাকা সংস্থার দোষেই এই দুর্ঘটনা। তিনি বলেন,“ পর পর গার্ডার জুড়ে সেতুটি তৈরি হচ্ছিল। নিয়ম অনুযায়ী গার্ডারের উপর কংক্রিট স্ল্যাব বসানোর পর নীচে ঠেকা দিয়ে রাখা হয় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। সেই লোহার সাপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নির্মাণকারী সংস্থা দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের না জানিয়েই সরিয়ে দেয়। সেই কারণেই এই বিপত্তি।”
দেখুন ভিডিয়ো:
কিন্তু নির্মাণকারী সংস্থা নিয়ম ভাঙার পর কেন দফতরের ইঞ্জিনিয়ররা ব্যবস্থা নিলেন না? সে প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের কেউ মুখ খোলেননি। ঘটনাস্থলে কাকদ্বীপ এবং হারউড পয়েন্ট উপকূল থানার আধিকারিকরা পৌঁছন। পরিদর্শনে গিয়েছেন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ররাও।
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘কাকদ্বীপে কালনাগিনী নদীর উপর নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় আরো একবার রাজ্য সরকারের অপদার্থতা সামনে এসে পড়লো। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সেতু ভেঙে পড়া যেন রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অপদার্থতা ও অযোগ্যতাকে তীব্র ধিক্কার জানাই। পুরনো সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ -কোনওটাই এই রাজ্য সরকার গ্রহণ করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, কাকদ্বীপের নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়া এটাও প্রমাণ করে দিলো যে, কেবলমাত্র সেতুর গঠনে নয়, এই রাজ্য সরকারের সর্বস্তরে আজ চরম ঘুণ ধরে গিয়েছে’’
পোস্তা এবং শিলিগুড়িতেও একই ভাবে নির্মীয়মাণ ব্রিজ ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। আর সম্প্রতিই মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়।