যেন আধমরার ঘাড়ে নতুন কোপ! এয়ার ইন্ডিয়া যেতে না-যেতেই দেনার খাতা হাতে হাজির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একের পর এক পাওনাদারের ঠেলায় রীতিমতো কোণঠাসা অন্ডাল বিমানবন্দর।
বকেয়া চার কোটি না-পেয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বুধবার অন্ডাল থেকে উড়ান তুলে নিয়েছে। এ বার নিজেদের পাওনা দু’কোটি টাকার দাবিতে অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক সংস্থাকে চেপে ধরেছেন ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই)। বৃহস্পতিবার অন্ডালে গিয়ে তাঁরা ওই সংস্থা, অর্থাৎ বেঙ্গল এরোট্রপলিস (বিএপিএল)-কে সাফ জানিয়ে এসেছেন, বকেয়া না-পেলে ওখানে নিযুক্ত এএআইয়ের সব অফিসারকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
সব মিলিয়ে তাগাদার সাঁড়াশি চাপে বিএপিএলের হাঁসফাঁস দশা। সূত্রের খবর: তারা কিছু সময় চেয়ে এএআই’কে অনুরোধ করেছে, এখনই যেন অফিসার প্রত্যাহার না-হয়। এএআই আপাতত বিমানবন্দরটি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও পাওনা আদায়ের প্রশ্নটি পিছনে সরছে না। ‘‘কেন্দ্রীয় নীতি মেনে এখনকার মতো আমরা অন্ডাল খোলা রাখছি। তবে বিএপিএলের কাছে আমাদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া। তা উদ্ধারের জন্য আলোচনা চলছে।’’— এ দিন বলেছেন এএআইয়ের রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈন।
ভারত সরকারের অধীনস্থ এএআই দেশের অধিকাংশ বিমানবন্দরের মালিক। বিমান ওঠা-নামায় সাহায্যকারী এয়ার ট্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে পাইলটদের যোগাযোগ ব্যবস্থা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সূত্রের খবর: বেসরকারি মালিকানার অন্ডাল বিমানবন্দরে এটিসি-ব্যবস্থা চালু রাখার খাতিরে এএআই মোট ৯ অফিসারকে বসিয়েছিল। চুক্তি ছিল, ওঁদের বেতন বাবদ খরচটা বিএপিএল পুষিয়ে দেবে। পাশাপাশি তারা বিমান ওঠা-নামায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ভাড়া মেটাবে। উপরন্তু পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগের ফ্রিকোয়েন্সি-মাসুলও গুণবে।
আর এ সব মিলিয়েই বিএপিএলের কাছে তাঁদের পাওনার অঙ্ক দু’কোটি ছুঁয়ে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন এএআইয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘শর্ত ছিল, টাকা বকেয়া পড়লে ২% সুদ দিতে হবে। বিএপিএল এখন মাসে মাসে শুধু সুদের টাকাটাই দিচ্ছে।’’
ওঁরা এত দিন চুপচাপ ছিলেন কেন?
ওই কর্তার ব্যাখ্যা, এ যাবৎ অন্ডাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন এয়ার ইন্ডিয়া উড়ান চালাচ্ছিল। ওঁরা সে পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাননি। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া অন্ডালের পাট গুটোনোয় পরিস্থিতি বেবাক বদলে গিয়েছে। তাই এখন তাগাদা। এএআইয়ের প্রশ্ন— কোনও উড়ান না-থাকা সত্ত্বেও এ ভাবে অন্যের পাওনা ফেলে রেখে বিমানবন্দর খুলে রাখার যুক্তি কী?
বিএপিএল অবশ্য আশাবাদী। সঙ্কট মোকাবিলার জন্য তারা সময় চাইছে। সংস্থার দাবি, হাতে তিন-চার মাস পেলে অন্য কোনও বিমানসংস্থাকে অনুরোধ করে অন্ডাল থেকে উড়ান চালানোর ব্যবস্থা হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত, আপাতত ওখানে বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও রোজ কিছু সময়ের জন্য এটিসি সচল রাখা হবে।
তাতে কিন্তু সংশয়ের নিরসন হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে, অন্য বিমানসংস্থা এলেও কি তারা রাতারাতি লাভের মুখ দেখবে? যাত্রী না-বাড়লে তো তখনও বিমানসংস্থার ক্ষতি বিএপিএলকেই পুষিয়ে দিতে হবে! এক দিকে সেই ভর্তুকির চাপ, অন্য দিকে এএআইয়ের পাওনা— এত খরচ মিটবে কোথা থেকে?
বিএপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক জবাব মেলেনি। ফলে অন্ডালের ভবিতব্য ধোঁয়াশাতেই ঢাকা।