অন্ধ্রে বিপন্ন প্রসূতি, ত্রাতা সোদপুরের হ্যাম রেডিও

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের কাছে শ্রীকুর্মাম-এর ত্রাণ শিবিরে মধ্য তিরিশের অশ্বিনী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। হুদহুদের তাণ্ডবে ত্রাণ শিবিরের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ, জল, খাবার নেই। টেলিফোন বা সরকারি ওয়্যারলেস ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। কাছেই মোগাডালাপাডু সৈকতে ৮মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

সোদপুর স্টেশন রোডে শৌখিন রেডিও-প্রেমীরা ব্যস্ত হুদহুদের খবর আদানপ্রদানে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের কাছে শ্রীকুর্মাম-এর ত্রাণ শিবিরে মধ্য তিরিশের অশ্বিনী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। হুদহুদের তাণ্ডবে ত্রাণ শিবিরের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ, জল, খাবার নেই। টেলিফোন বা সরকারি ওয়্যারলেস ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। কাছেই মোগাডালাপাডু সৈকতে ৮মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

Advertisement

গিলে ফেলেছে ঘরবাড়ি-দোকান। রবিবার দুপুর তিনটে। ত্রাণ শিবির থেকে আসন্ন-প্রসবাকে হাসপাতালে পাঠানোর কেউ নেই।

সেখান থেকে ৭৭১ কিলোমিটার দূরে কলকাতার উত্তর শহরতলিতে সোদপুর স্টেশন রোডে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের দফতরে বসে খবরটা পান কয়েক জন শৌখিন রেডিও-প্রেমী। সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কন্ট্রোল রুমে খবরটি পাঠালেন তাঁরা। সেখান থেকে তা জানানো হল অন্ধ্র সরকারকে।

Advertisement

বিকেল চারটে নাগাদ জানা যায়, শ্রীকাকুলামের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ওই মহিলাকে। সারাদিন ধরে দুর্যোগের এমন অসংখ্য খবর সংগ্রহ এবং সাহায্যের ব্যবস্থা করে চলেছে প্রায় চল্লিশটি শৌখিন রেডিও স্টেশন। এ রাজ্যে সোদপুর স্টেশন রোডের ওই রেডিও ক্লাব তার অন্যতম। বাকিগুলি অন্ধ্র ও ওড়িশায়। এই ধরনের রেডিও স্টেশনগুলি বিশ্বে হ্যাম রেডিও হিসেবে পরিচিত।

গত তিন দিন ধরে এ দেশের হ্যাম রেডিওর অনেক সদস্যই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে। ওড়িশা সরকার অবশ্য গত বছর পিলিনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমুদ্র উপকূলে হ্যামের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাঁচটি স্থায়ী রেডিও স্টেশন তৈরি করেছে। যেখান থেকে প্রতিনিয়ত হাওয়ার গতিবেগ, বৃষ্টিপাত-সহ দুর্যোগ মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা ক্ষয়-ক্ষতির খতিয়ান দেওয়া হচ্ছে। ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চিফ জেনারেল ম্যানেজার কমললোচন মিশ্র বলেন, ‘‘হুদহুদের জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে হ্যাম রেডিওর সাহায্য চেয়েছি।’’ হ্যাম সদস্যরাও রেড অ্যালার্ট জারি থাকা এলাকাগুলোয় অস্থায়ী রেডিও স্টেশন করেছেন সোলার প্যানেল, পাওয়ার ব্যাঙ্ক (একটানা চলতে পারে এমন ব্যাটারি) আর হাই-ফ্রিকোয়েন্সি পোর্টেবল ওয়্যারলেস সেট নিয়ে। সেখান থেকেই নিজেদের মধ্যে ঝড়ের খবর আদান-প্রদান করছেন। সোদপুর আর হায়দরাবাদে মূল দু’টি স্টেশন নিজেদের মধ্যে কথপোকথন চালাচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গেও চলছে খবরাখবর বিনিময়।

সোদপুরে হ্যাম রেডিও স্টেশনে ক্রমাগত তথ্য আসছে নিজেদের সাঙ্কেতিক ভাষায়। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস, সন্তু শিকদার এর মতো সাত জন হ্যাম সদস্য একাধিক রেডিও সেটে তথ্য নিচ্ছেন, সময় ধরে ধরে খাতায় লিখছেন ও প্রয়োজনীয় তথ্য জায়গামতো জানাচ্ছেন। এঁরা কেউ চাকরি করেন, কেউ ব্যবসা, কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘বেতার ব্যবস্থা শেখার শখ থেকেই সবাই আসে। তার পর মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করতে পারার নেশা তৈরি হয়ে যায়। গঙ্গাসাগর হোক বা কুম্ভমেলা, কিংবা কেদার-বদ্রী, সর্বত্র আমাদের সদস্যরা রেডিও সেট নিয়ে হাজির থাকেন।’’ তথ্য দেওয়া-নেওয়া ছাড়াও হ্যাম রেডিও এমন একটা তরঙ্গ ব্যবহার করে যা খোলা জায়গায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে থাকা অন্য হ্যামকে ওই বিশেষ তরঙ্গ পাঠাতে পারে। এর ফলে দুর্যোগের সময় ওই তরঙ্গের মাধ্যমে এক জন অন্য জনের অবস্থান জানতে পারে। অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি পর্বতারোহীদের হ্যাম রেডিও ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করার জন্য। তা হলে ছন্দা গায়েনের ঘটনা আর ঘটবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন