বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ এমসিআই-এর তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এ রাজ্যে প্রায় নিঃশব্দেই চলতি নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন একটি মেডিক্যাল কলেজের ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন!
এই মেডিক্যাল কলেজ একেবারে অন্য ধরনের। ভারতে এ রকম কতগুলি রয়েছে বা আদৌ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাই নিশ্চিত নন। ওই কলেজে পঠনপাঠন শুরু করতে কোনও সরকারি অনুমোদন বা ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র বোর্ড অব গভর্নর্স-এর সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা করা হয়নি।কলেজকর্তাদের দাবি, ‘‘তার প্রয়োজন নেই।’’
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে ওই কলেজ ‘এনওসি’-র জন্য আবেদন করেছে বটে। কিন্তু জবাব আসার আগেই গত ১৫ নভেম্বর ৩৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে এবং একাধিক আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েই তাঁরা পঠনপাঠন চালু করেছেন। রাজ্যের এনওসি জরুরি নয়। সৌজন্যের খাতিরেই তাঁরা রাজ্যের কাছে এনওসি-র আবেদন করেছেন। ভর্তির প্রক্রিয়াও চলছে ওই কলেজে। মোট আসন ৬০টি।
হাওড়ার ফুলেশ্বরে ২০১২ সালে চালু হয়েছিল সঞ্জীবন হাসপাতাল। বেশ কয়েক জন চিকিৎসক মিলে সেটি পরিচালনা করেন। সেখানেই মালয়েশিয়ার ‘লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি কলেজ’-এর এমডি (যা ভারতের এমবিবিএসের সমতুল)-র ক্যাম্পাস চালু হয়েছে। বিষয়টি চিন, ইউক্রেন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার মতো। তফাত হল, এ ক্ষেত্রে বিদেশ যেতে হবে না। ভারতে চুক্তিবদ্ধ কোনও হাসপাতালেই ক্লাস করা যাবে এবং বিদেশের ডিগ্রি মিলবে।
বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ এমসিআই-এর তালিকাভুক্ত রয়েছে। দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুযোগ না-পেয়ে প্রতি বছরই বহু ছেলেমেয়ে বিপুল টাকার বিনিময়ে ওই সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়তে যান। পাশ করে ভারতে ডাক্তারি করতে তাঁদের এমসিআই-এর একটি পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।
মালয়েশিয়ার লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি কলেজ এমসিআই-এর তালিকাভুক্ত এমনই একটি কলেজ। এত দিন ভারত থেকে ছাত্রছাত্রীরা ওই কলেজে ডাক্তারি পড়তে যেতেন। এখন সঞ্জীবন হাসপাতালেই ওই কলেজের ‘অফশোর মেডিক্যাল লাইসেন্সিং প্রিপারেশন সেন্টার’ খোলা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের ছাত্রছাত্রীরা সেখানকার পাঠ্যক্রমের ক্লাস সঞ্জীবনেই করতে পারবেন। ডিগ্রিও পাবেন এখানে বসে।
কিন্তু এমসিআই-এর বোর্ড অব গভর্নর্স কি এই ডিগ্রিকে বৈধ বলে মানবে? এখান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা কি রেজিস্ট্রেশনের জন্য এমসিআই-এর পরীক্ষায় বসতে পারবেন? বোর্ড অব গভর্নর্সের তরফে বিনোদকুমার পাল বলেন, ‘‘বিষয়টা শুনেছি। এর আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তা হলে কি ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত? সঞ্জীবনের অধিকর্তা, চিকিৎসক শুভাশিস মিত্রের দাবি, ‘‘একেবারেই নয়। গত জানুয়ারিতে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে বলেছে, কোনও মেডিক্যাল কলেজ বৈধ হলে তার ক্লাস দেশে-বিদেশে কোথায় হচ্ছে, তা বিচার্য নয়। সেই রায়ের পরেই আমরা পঠনপাঠন চালু করেছি। আইনজ্ঞদের পরামর্শও নিয়েছি।’’
কী ভাবে ভর্তি হয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা? শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘নিট-এ সফল ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পেরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়ে যাঁদের যোগ্য মনে হয়েছে, তাঁদের নিয়েছি।’’ ভর্তির টাকার অঙ্ক নিয়ে তিনি মুখ খুলতে চাননি।
সঞ্জীবন হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঠ্যক্রম চালুর জন্য চিঠিতে রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ বলেই অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এনওসি পাওয়ার আগেই যে ওরা ক্লাস শুরু করে দেবে, তা জানতাম না। এটা করা যায় কি না, সে বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’’