Anubrata Mondal on Kajal Shah

‘খুব ভাল ছেলে’, কাজল সম্পর্কে বলেছিলেন কেষ্ট

শনিবার রাতে ওই খুনের ঘটনায় বালি কারবারের ‘নিয়ন্ত্রক’, সিউড়ি থানার বাঁশজোড়ের বাসিন্দা কাজল ও তাঁর সঙ্গীরা গ্রেফতার হয়েছেন। এর পরেই কাজলের নাম চর্চায় এসেছে আবার।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১৫
Share:

শনিবার বাঁশজোড়ে বালিঘাট নিয়ে বিবাদের রাতেই সিউড়ি সার্কিট হাউসে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পিছনে কাজল শাহ (চিহ্নিত)। রবিবার সকালে কাজলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

এর আগে জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে বোমাবাজিতে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম জড়িয়েছিল সিউড়ির তৃণমূল নেতা কাজল শাহের। কিন্তু, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলে দিয়েছিলেন, ‘কাজল খুব ভাল ছেলে’। এ বার গ্রামেরই এক তরুণকে কুপিয়ে খুন করার সরাসরি অভিযোগ উঠেছে কাজলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শনিবার রাতে ওই খুনের ঘটনায় বালি কারবারের ‘নিয়ন্ত্রক’, সিউড়ি থানার বাঁশজোড়ের বাসিন্দা কাজল ও তাঁর সঙ্গীরা গ্রেফতার হয়েছেন। এর পরেই কাজলের নাম চর্চায় এসেছে আবার। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ জেলা তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে কাজলকে। আবার কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে, আসানসোলে গিয়ে জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে।

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, রীতিমতো প্রভাবশালী এই কাজল। নিহত তরুণ ফাইজুল শেখের বাবা শেখ মাহফুজ রবিবার বলছিলেন, ‘‘এতটাই প্রভাব কাজলের, গ্রেফতার করা হলেও ওঁর বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আদৌ নিতে পারবে পুলিশ? আমাদের বিশ্বাস হয় না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কাজলের মাথায় শাসক দলের নেতাদের হাত আছে। তা না হলে জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে বোমাবাজিতে গ্রেফতার হওয়ার পরেও বেকসুর খালাস হয় কী করে!’’

Advertisement

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য এ দিন সিউড়িতে জানিয়েছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজল এখন কোনও পদে নেই। রং দেখে নয়, কেউ অপরাধী হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তৃণমূলেরই অন্দরের খবর, এক দশকের কিছু আগে আনাজ ব্যবসায়ী কাজলকে প্রথম দলে স্থান দিয়েছিলেন সিউড়ির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক স্বপন ঘোষ। অভিযোগ, সেই সময় ময়ূরাক্ষীর বালিঘাটগুলিতে একতরফা কব্জা ছিল সিপিএমের মদতপুষ্ট ঘাট মালিকদের। তাঁদের বিরুদ্ধে লড়ে বিশেষ করে আলুন্দা অঞ্চলের ঘাটগুলিতে ক্রমশ নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করেন কাজল। ২০১৩ সালে ‘কাজের ছেলে’ কাজলকে পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেয় দল। জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হন তিনি। বিধায়ক স্বপন ঘোষের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকলে শিবির বদল করে প্রয়াত ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহের শিবিরে চলে আসেন কাজল।

স্থানীয় সূত্রে দাবি, একটা সময় বীরভূমের বালি-কারবারে তৃণমূলের আধিপত্য চলে আসে। কর্মাধ্যক্ষের পদ, কাঁচা টাকার দেদার আমদানি, লোকবলের সৌজন্যে বাঁশজোড় ও লাগোয়া এলাকায় কার্যত বালি কারবারে একাধিপত্য কায়েম হয় কাজলের, এবং সেটা নিজে বালি ঘাটের বৈধ মালিক না-হয়েই।

এলাকা সূত্রের খবর, বালিঘাটে লিজ নেওয়ার পদ্ধতি বদলের পরে একটি বালি ঘাট ছিল কাজলের ভাইয়ের নামে। তবে, নিয়ন্ত্রণ ছিল কাজলের হাতে। ২০১৯ সালে জেলাশাসকের বাংলোয় বোমাবাজিতে কাজল-সহ পাঁচ সঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই ঘাটের নিয়ন্ত্রণ কাজলের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। গ্রেফতারির ঠিক পরেই অনুব্রত নিজে কাজলকে শংসাপত্র দিয়েছিলেন।

বর্তমানে বাঁশজোড় লাগোয়া ময়ূরাক্ষীর বালিঘাটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন কাজল-ই। অভিযোগ, শনিবার রাতে বাঁশজোড় গ্রামে শেখ ফাইজুল নামে যে তরুণকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে, তার নেপথ্যেও সেই বালিঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদ-ই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একতরফা বালিঘাটের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গ্রামে বেশ কিছু মানুষের বিরাগভাজন হতে হয় কাজলকে। বিপক্ষে উঠে আসেন শেখ আতাই। দু’পক্ষের মাঝেমধ্যেই বোমাবাজি, সংঘাত হচ্ছিল ওই গ্রামে। আতাই-গোষ্ঠীতে রয়েছেন নিহতের বাবাও।

সেই সংঘাতের পরিণামই ফাইজুল-হত্যা, এমনটাই দাবি বাঁশজোড়ের বাসিন্দাদের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন