Mamata Banerjee-CV Ananda Bose

মানহানির প্রমাণ ছাড়াই অন্তর্বর্তী নির্দেশ কী ভাবে? রাজ্যপালের মামলায় প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর

ডিভিশন বেঞ্চে শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, মানহানি করা হয়েছে এমন কোনও পর্যবেক্ষণ না রেখেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৬
Share:

(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের করা মানহানি মামলায় অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ ছাড়াই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই দাবি করা হল মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের তরফে।

Advertisement

সৌমেন্দ্রনাথের দাবি, অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে গিয়ে মানহানি করা হয়েছে এমন কোনও পর্যবেক্ষণ না রেখেই নির্দেশ দিয়েছেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘জনগণের স্বার্থে ওই মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালের উদ্দেশে তাঁর কোনও মন্তব্যই মানহানিকর নয়। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে মানহানি হয়েছে এমন কিছুই পাওয়া যায়নি। সিঙ্গল বেঞ্চ এই বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে।’’ বুধবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে সময়ের অভাবে শুনানি সম্পূর্ণ হয়নি। বৃহস্পতিবার আবার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। তৃণমূলের দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেয়াত হোসেন সরকার এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকেও ওই মামলায় যুক্ত করা হয় রাজ্যপালের তরফে। গত ১৬ জুলাই বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের এজলাসে শুনানি হয় এই মামলার। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারীর দাবি অনুযায়ী, তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বেশ কিছু মন্তব্যে। ওই রকম মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত। আগামী ১৪ অগস্ট পর্যন্ত রাজ্যপালের মানহানি হয় এমন কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।

Advertisement

যদি এই পর্যায়ে অন্তর্বর্তিকালীন আদেশ মঞ্জুর-না করা হয় তবে মামলাকারীর বিরুদ্ধে মানহানিকর বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টিতে উৎসাহ দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়েছিলেন বিচারপতি রাও। সেই অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে দায়ের করা মামলায় মমতার আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ তাঁর মক্কেলের মন্তব্যে কোন যুক্তিতে মানহানি হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তা জনসমক্ষে রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। এখন মূল ঘটনার অভিযোগকারিণী সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। ফলে এ নিয়ে রাজ্যপালের কী ভাবে মানহানি হল? এই মামলায় কোনও সংবাদমাধ্যমকে যুক্ত করা হয়নি’’

অন্য দিকে, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মানহানিকর মন্তব্য করেননি বলে তাঁর আইনজীবী যুক্তি দেন। তাঁর আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র শুনানিতে বলেন, ‘‘আমার মক্কেল একটি সংবাদমাধ্যমে কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছি। বিধানসভাতেই আমার শপথ গ্রহণ করানো হোক। অত্যন্ত সাধারণ ভাবে এ কথা বলেছেন। এটা কী ভাবে মানহানি হতে পারে। কোনও ব্যক্তির রাজভবনে যেতে ভয় পাওয়ার কারণে কি মানহানি হতে পারে?’’

গত ১৬ জুলাই অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশ ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি রাও বলেছিলেন, ‘‘এটা স্বীকার করতেই হবে যে মামলাকারী সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের এক জন। তাঁর বিরুদ্ধে যে সব মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।’’ আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘বাদী পক্ষ একটি প্রাথমিক মামলা করেছে এবং এই পর্যায়ে একটি অন্তর্বর্তী আদেশ মঞ্জুর করা-না হলে সেটা বিবাদী পক্ষকে মানহানিকর বিবৃতি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার শামিল হবে। তাতে দুই পক্ষেরই সুনামের উপর প্রভাব পড়তে পারে।’’ সিঙ্গল বেঞ্চের ওই অন্তর্বর্তী নির্দেশের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানিয়েছিলেন, ওই নির্দেশের বিরোধিতায় তাঁরা উচ্চতর আদালতে যাবেন। সেই মতোই ১৯ জুলাই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement