আউশগ্রাম-কাণ্ড

আউশগ্রামে ধৃত তৃণমূল নেতার মেয়েরা অধীরের সভায়

আগের দিনই আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর বলেছিলেন, ‘তৃণমূল করি বলতে লজ্জা করছে’। পরদিন, সোমবার গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর সভায় মঞ্চে দেখা গেল, গুসকরার ওই কাউন্সিলর চঞ্চাল গড়াইয়ের দুই মেয়ে ও অন্য পরিজনদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

গুসকরায় তৃণমূল নেতা চঞ্চল গড়াইয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন অধীর চৌধুরী। সোমবার। ছবি: নিজস্ব চিত্র

আগের দিনই আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর বলেছিলেন, ‘তৃণমূল করি বলতে লজ্জা করছে’। পরদিন, সোমবার গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর সভায় মঞ্চে দেখা গেল, গুসকরার ওই কাউন্সিলর চঞ্চাল গড়াইয়ের দুই মেয়ে ও অন্য পরিজনদের।

Advertisement

সোমবার ওই সভায় চঞ্চলবাবুর ছোট মেয়ে সর্বাণী গড়াই বলেন, “বাবার সঙ্গে যে ঘটনা হয়েছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই। সুবিচার পাওয়ার আশায় সভায় এসেছি।” বড় মেয়ে দেবযানীর মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে হলেও রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। তৃণমূল আমাদের রাজনীতিতে আসতে বাধ্য করল।”

সভা শেষে অধীরবাবু চঞ্চলবাবুর বাড়িতে গিয়ে ধৃত নেতার স্ত্রী মীরাদেবীকে বলেন, ‘‘উনি প্রথম দিন থেকে তৃণমূল করছেন। কিন্তু দলই পাশে থাকল না। আপনাদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে। আমরা আপনাদের সাহায্য করব।”

Advertisement

আউশগ্রাম হাইস্কুলের জায়গায় আউশগ্রাম থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ থেকে গোলমালের শুরু। শুক্রবার স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি, এলাকার তৃণমূল নেতা চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু শিক্ষক ও পড়ুয়াকে নিয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় যান। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে। প্রতিবাদে অবরোধ হয়। তা তুলতে গেলে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। শনিবার থানায় ভাঙচুর, আগুন লাগানো, পুলিশকর্মীদের মারধর করার ঘটনা ঘটে। পাল্টা ধরপাকড় চালায় পুলিশ। গোলমালে মদত দেওয়ার অভিযোগে চঞ্চলবাবু এবং সিপিএম নেতা সুরেন হেমব্রমকে ধরে পুলিশ।

অনুগামীদের অনুমান, চঞ্চলবাবু গ্রেফতার হওয়ার পিছনে দলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর প্রভাব থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই। তৃণমূল অন্দরের খবর, গুসকরার রাজনীতিতে চঞ্চলবাবু দলে আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক তথা বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত। এ দিন নাম না করে অনুব্রতকে কটাক্ষ করেন অধীর। বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক নেতার কথায় গুসকরার নির্ভীক ও স্বচ্ছ নেতাকে গ্রেফতার করা হল। কারণ, ওই নেতার অনুগত ছিলেন না গুসকরার নেতা। সে জন্য ষড়যন্ত্র করে তাঁকে গ্রেফতার করানো হল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশ দলদাস না হয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’’

যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অনুব্রত। আউশগ্রাম হাইস্কুলের উল্টো দিকের মাঠে আজ, মঙ্গলবার দুপুরে সভা করার কথা তাঁর। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, চঞ্চাল গড়াইয়ের পাশে গুসকরার মানুষ নেই। আর তাঁর পরিবার কংগ্রেসের সভায় গিয়েছেন, তো বয়েই গিয়েছে।’’ তৃণমূলে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের দাবি, চঞ্চলবাবুর মেয়েদের পাশে নিয়ে সভা করে গুসকরার বিক্ষুব্ধ তৃণমূলদের কংগ্রেসে টানার চেষ্টা করেছেন অধীর। চঞ্চলবাবুকে গ্রেফতার ব্যাপারে পুলিশের ‘পক্ষপাত’ নিয়ে অধীরের অভিযোগ খারিজ করে জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেছেন, “শাসক দলের এক নেতাকে তো এমনি ধরা হয়নি। আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।”

এ দিন আউশগ্রাম বাজারে হ্যান্ড-মাইক নিয়ে ও গাড়িতে মাইক বেঁধে দোকানপাট খোলার জন্য ও গ্রামে ফেরার জন্য প্রচার চালায় পুলিশ। বলা হয়, ‘কোনও নির্দোষকে ধরা বা আটক করা হবে না। নিশ্চিন্তে দোকান খুলতে পারেন’। আর্জিতে কাজও দেয়। ঘরছাড়ারা গ্রামে না ফিরলেও আউশগ্রাম বাজারের শতাধিক দোকানের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ খোলে এ দিন। এমনকী, যে স্কুলের জায়গা দখল নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত সেই আউশগ্রাম হাইস্কুলও খুলেছিল। তবে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের সংখ্যা কম ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement