খোঁজ নেবে শিক্ষা দফতর

স্কুলে কেন রোজ গরহাজির অশোক

তিনি ছাত্র সংগঠনের হর্তাকর্তা। পেশায় শিক্ষকও বটে। কিন্তু দিনের পর দিন কর্মস্থলে না এসেও দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে সহকর্মীদের অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বেরোচ্ছেন অশোক রুদ্র। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে। — নিজস্ব চিত্র।

তিনি ছাত্র সংগঠনের হর্তাকর্তা। পেশায় শিক্ষকও বটে। কিন্তু দিনের পর দিন কর্মস্থলে না এসেও দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে সহকর্মীদের অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাতে হেলদোল নেই অশোকের। তাঁর দাবি, সরকারের কাছ থেকে তাঁর বিশেষ অনুমতি নেওয়া রয়েছে। শিক্ষা দফতর অবশ্য এমন অনুমতির কথা জানে না বলেই দাবি করছে। অভিযোগ পেয়ে অশোকের গরহাজিরা নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে তারা।

Advertisement

বার্নপুরের নরসিংহবাঁধে হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোক। বছর চারেক আগে চাকরিতে ঢোকেন। এক সময় পিটিটিআই আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে গিয়ে অশোকের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে বেশির ভাগ পড়ুয়াই জানায়, তারা এই নামে কোনও শিক্ষককে চেনে না। স্কুলের শিক্ষকদের প্রশ্ন করা হলে উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি চলে যান তাঁরা। প্রধান শিক্ষক নাগেশ্বর প্রসাদ অবশ্য বলেন, ‘‘অশোকবাবু স্কুলে আসেন। তবে মাঝে-মাঝে কামাই হয়। যে দিন আসেন না, সে দিন হাজিরা হয় না।’’ অশোকবাবুর নিজের কথায়, ‘‘আমি রাজ্য সরকারের স্পোর্টস কাউন্সিলের সদস্য। সেই সুবাদে আমাকে মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন কাজে এলাকার বাইরে যেতে হয়। তখন স্কুলে অনুপস্থিত থাকার সরকারি অনুমতি আমার আছে।’’ তাঁরও দাবি, স্কুলে না এলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছুটি নেন তিনি।

বিরোধী শিক্ষক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কিন্তু অভিযোগ, অশোকবাবুকে স্কুলে প্রায় দেখাই যায় না। স্কুলে না এসেও তিনি নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন কী ভাবে, কেনই বা ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে স্কুলের সময়ে সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকছেন, সেটাই তাঁদের প্রশ্ন। এবিপিটিএ-র বর্ধমান জেলা সম্পাদক আশিস হাজরা বলছেন, ‘‘এক জন শিক্ষক কী ভাবে দিনের পর দিন স্কুলে না এসে পার পেয়ে যান, এই অভিযোগ ইতিমধ্যে তুলেছি। জেলা প্রাথমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছেও জানতে চাইব, কী ভাবে এমন ঘটছে।’’ বিরোধীদের দাবি, কোনও সরকারি কাজ নয়, রাজনৈতিক সংগঠনের কাজের অছিলাতেই অশোক দিনের পর দিন স্কুলে আসেন না। বুধবার যেমন তাঁকে সারা দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে। এর আগেও নানা সময়ে তাঁকে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি অশোক ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও রাজ্য সম্পাদক পদে রয়েছেন। ওই সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে গিয়ে ছাত্র পড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে অশোকবাবু আরও অনেক দায়িত্ব পালন করেন। স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন কি না, সেটা শিক্ষাচক্রের স্কুল পরিদর্শকই বলতে পারবেন।’’ হিরাপুর শিক্ষা চক্রের স্কুল পরিদর্শক সংহিতা দাসের বক্তব্য, ‘‘আমার কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।’’ এক জন শিক্ষক স্কুলে আসছেন না, তা খেয়াল রাখা হয় না কেন? স্কুল পরিদর্শকের জবাব, ‘‘হিরাপুর ছাড়াও আমাকে আরও একটি শিক্ষাচক্রের কাজ দেখতে হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে আমার পক্ষে সব স্কুলে গিয়ে কোথায় কোন শিক্ষক এলেন না, তা দেখা সম্ভব নয়।’’

অশোকবাবু যে দাবি করছেন, স্কুলে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি তাঁর আছে, শিক্ষা দফতর তা জানে কি? শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, এমন কিছু তাঁদের জানা নেই। তবে স্কুলে অশোকবাবুর দীর্ঘ অনুপস্থিতি সম্পর্কে অভিযোগ তাঁদের কানেও এসেছে। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে, দফতর সূত্রে এমনই খবর। এ দিন অশোকবাবু বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের ঢোকার অভিযোগ শুনে পার্থবাবুও অসন্তুষ্ট। অশোকবাবু নিজে বুধবার কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান-ধর্নায় বসেছিলেন, তা নিয়ে এ দিন মন্ত্রীর তিরস্কার সইতে হয়েছে তাঁকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত নিয়ে যাওয়া যে বরদাস্ত করা হবে না, সে বার্তাও তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন