নীল তিমির খপ্পরে এ রাজ্যের আর এক ছাত্র

এর মধ্যেই বাবা দেখেন, ছেলে হাত কেটে কী যেন এঁকেছে। তিনি পড়শিদের বিষয়টি জানান। এরপরেই শনিবার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাবা। ছেলে স্বীকার করে, সে এমন একটা খেলা খেলছে, যাতে হাত কেটে তিমির ছবি আঁকতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

আতঙ্ক: সেই তিমি। নিজস্ব চিত্র

কিছু দিন ধরেই ছেলের আচার-আচরণ সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল বাবা-মায়ের। সন্ধ্যা হলেই ঘরে মধ্যে আলো না জ্বালিয়ে মোবাইলে ব্যস্ত থাকত। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করত না। লেখাপড়াও লাটে উঠেছিল। পাঁচটা কথা জিজ্ঞেস করলে একটার উত্তর দিত। একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল মোবাইল। পাড়া প্রতিবেশীরদেরও বিষয়টি নজরে আসে।

Advertisement

এর মধ্যেই বাবা দেখেন, ছেলে হাত কেটে কী যেন এঁকেছে। তিনি পড়শিদের বিষয়টি জানান। এরপরেই শনিবার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাবা। ছেলে স্বীকার করে, সে এমন একটা খেলা খেলছে, যাতে হাত কেটে তিমির ছবি আঁকতে হয়।

খেলাটা ব্লু হোয়েল, গোটা বিশ্ব এখন কাঁপছে যার ভয়ে। বহু অল্পবয়সী ছেলেমেয়ের প্রাণ যাচ্ছে এই ভয়ঙ্কর খেলার নেশায় পড়ে। ভারতে ব্লু হোয়েলের শিকার হিসাবে প্রথম নজরে আসে মহারাষ্ট্রের শোলাপুরে এক তরুণের ঘটনা, যে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যা করতেই প্ররোচনা দেয় এই অনলাইন গেম।

Advertisement

গোপালনগর থানার কচুয়ামোড়া প্রত্যন্ত এলাকা। সেখানেই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে নীল তিমির ছবি নজরে পড়েছে। স্থানীয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে খবর পৌঁছয় গোপালনগর থানায়। ওসি অয়ন চক্রবর্তী ছেলেটির বাড়িতে পুলিশ পাঠান।

পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে ছেলেটি। আড়াই মাস ধরে গেমটি খেলছিল বলে সে পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, ছেলেটির বাঁ হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা দাগ আছে। আদলটা অনেকটা তিমি মাছের মতোই। তার উপরে কলম দিয়ে বোলানো।

বাবা পরিতোষবাবু চাষবাস করেন।

শনিবার দুপুরে গোপালনগর থানার পুলিশ ছেলেটিকে চিকিৎসার জন্য বনগাঁ মবকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসকেরা তাকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন।

পরিবার সূত্রের খবর, কিছু দিন ধরেই মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য বায়না জুড়েছিল ছেলে। বাড়ির ছাগল বেচে ছেলেকে অ্যানড্রয়েড ফোন কিনে দেন। তারপর থেকে মোবাইল নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থাকত ছেলে।

এ দিন মোবাইল কেড়ে নেন বাবা। সিম কার্ড বের করে ভেঙে ফেলেন। পুলিশ মোবাইলটি উদ্ধার করলেও সেটি লক করা আছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছেলেটি তার বাবাকে বলেছে, আমাদের কাছেও স্বীকার করেছে, ব্লু হোয়েল গেম খেলত সে। মোবাইলটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’ তবে ছেলেটি পরিবার-পরিজনকে বলেছে, মাত্র পাঁচ রাউন্ড পর্যন্ত সে খেলেছে।

ছেলের বাবার কথায়, ‘‘মোবাইল কিনে দেওয়াটাই কাল হল।’’ ছেলের মায়ের কথায়, ‘‘আমাদের চোখের সামনে থেকে ও এমন বিপজ্জনক কাজ করছিল, বুঝতেই পারিনি।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ৮টা নাগাদ ঘরে এসে আলো বন্ধ করে দিত ছেলেটি। ভোর ৫টা পর্যন্ত মোবাইলে খেলত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন