স্নানে নেমে  নিখোঁজ পাঁচ যুবক

প্রত্যেকেরই বয়স ২১ বছরের আশেপাশে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে খাওয়াদাওয়া সেরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দামোদরে নামেন ওই দলটির ছ’জন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছ’জন তলিয়ে যেতে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share:

চলছে উদ্ধারকাজ। নিজস্ব চিত্র

ফের দামোদর। ফের স্নান করতে নেমে তলিয়ে গেলেন পাঁচ যুবক। এ বার বছর শেষের দিন, বার্নপুরের সূর্যনগর এলাকায়। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, সচেতনতার অভাব থাকাতেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। কারণ, প্রশাসনের দাবি, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা ‘পিকনিক স্পট’ই নয়।

Advertisement

হিরাপুর থানার পুলিশ জানায়, আসানসোল দক্ষিণ থানার অন্তর্গত শ্রীপল্লি থেকে বারো জনের একটি দল রবিবার সকালে পিকনিক করতে আসেন ঢাকেশ্বরী পাম্পহাউস সূর্যনগর বালিঘাটে। প্রত্যেকেরই বয়স ২১ বছরের আশেপাশে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে খাওয়াদাওয়া সেরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দামোদরে নামেন ওই দলটির ছ’জন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছ’জন তলিয়ে যেতে থাকেন।

বন্ধুদের তলিয়ে যেতে দেখে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাকিরা জলে ঝাঁপ দেন। কিন্তু এক জন বাদে তলিয়ে যান সিন্ধু কাজি, পরিচয় চট্টোপাধ্যায়, প্রতীক নন্দী, রাহুল দেবনাথ, দেবব্রত রায়। পাঁচ বন্ধুকে তলিয়ে যেতে দেখে বাকিরা হিরাপুর থানায় যোগাযোগ করে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন হিরাপুর থানার পুলিশকর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরা। তল্লাশির প্রাথমিক কাজও শুরু হয়। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘তল্লাশির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অন্ধকার নেমে যাওয়ায় তল্লাশির কাজে সমস্যা হচ্ছে।’’

Advertisement

ঘটনার কথা চাউর হতেই এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এই এলাকা কার্যত পাণ্ডববর্জিত। ‘পিকনিক স্পট’-ও নয়।’’ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ওই এলাকায় সাধারণত কোনও দল পিকনিক করতেও আসে না। এ দিনও হাতে গোনা কয়েকটি দল এসেছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ঘটনার সময়ে বাকি দলগুলি এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।

প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে বাস্তবে সেখানে কোনও ঘাটই নেই। সাধারণ ভাবে পাম্পহাউস লাগোয়া এলাকায় স্নানে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কারণ এই সব এলাকায় জলে ঘুর্ণি থাকে। ফলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার এর আগে সচেতনতা প্রচার চালানো হলেও তাতে অনেকেরই টনক নড়েনি বলে আক্ষেপ প্রশাসনের এক কর্তার। লাগোয়া ঢাকেশ্বরী রোডে নিয়মিত পুলিশি টহলও চলে বলে দাবি।

এর আগে দামোদর, অজয়ে ‘বিপদে’র সংখ্যা কম নয়। যেমন, গত বছরই দুর্গাপুরে দামোদরে স্নান করতে নেমে মৃত্যু হয় মোট ছ’জনের। জামুড়িয়ার বীরকুলটি গ্রামে অজয়ে নেমে তলিয়ে যায় দুই কিশোর। গত নভেম্বরে তর্পণ করে স্নান করতে নেমে বার্নপুরে দামোদরে তলিয়ে মৃত্যু মন্ত্রী মলয় ঘটকের দাদার।

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ ধরনের ‘বিপদে’র সম্মুখীন হয় কিশোর এবং যুবকেরা। বিষয়টি নিয়ে কিছু দিন আগে স্কুল, কলেজে সচেতনতা প্রচার চালানোর কথাও জানিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও জলে নামা নিয়ে অনেকেরই হুঁশ ফেরেনি বলেই আক্ষেপ এলাকাবাসীর একাংশের। পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কমবয়সীদের মধ্যে সচেতনতা প্রচার আরও জোরদার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন