জামালপুরে তছরুপে অভিযুক্ত কর্মী

হাততালিতে খুলল দরজা, অবাক পুলিশ

গুহার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে থরে থরে সাজানো হিরে, জহরত দেখে যেমন চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল কাশেমের, এ দরজা খুললেও চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৯
Share:

হাততালি দিয়ে তিন বার চিচিং ফাঁক বললে তবেই ঢোকা যেত আলিবাবার গুহায়। এ দরজাও খোলে কর্তা বা গিন্নির জোড়া হাততালিতে।

Advertisement

গুহার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে থরে থরে সাজানো হিরে, জহরত দেখে যেমন চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল কাশেমের, এ দরজা খুললেও চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের। ৬৫ ইঞ্চির টিভি স্ক্রিন, দামী আসবাব, গয়না, নগদ সবই মেলে টাকা তছরুপে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত কর্মী সুকান্ত পালের ঘর থেকে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “জামালপুরের মতো পিছিয়ে পড়া ব্লকের তস্য গ্রামের ভিতর ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ি, হাততালি দিয়ে দরজা খোলা দেখে আবাক হয়ে গিয়েছি আমরা। যে কর্মী মাইনে পেতেন সাড়ে ছ’হাজার টাকা, তাঁর বাড়িতে ৪টে লোকের জন্য টিভিই রয়েছে ৫টি!’’

Advertisement

কাঁশরা গ্রামের বাসিন্দা অভিযুক্ত সুকান্ত পঞ্চায়েতের ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ ছিলেন। তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী ঋষিতাকে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে আগেই ধরেছিল পুলিশ। শুক্রবার ঋষিতাকে নিয়ে তাঁদের বসতবাড়িতে তদন্তে যান তদন্তকারীরা। জামালপুর থানার পুলিশকর্মীদের দাবি, ঋষিতার হাততালিতে খোলে দরজা। ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা দামের ৬৫ ইঞ্চির টিভি-সহ ৫টি টিভি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, নামী সংস্থার দামী আসবাবপত্র, দু’টি ডিএসএলআর ক্যামেরা, প্রায় ১৭ ভরি সোনার গয়না, গাড়ি-স্কুটার আর নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা মিলেছে বাড়ি থেকে। আর মিলেছে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার ‘ভিডিও-মিক্সিং সফটওয়্যার।’

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সুকান্ত প্রথমে জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে কাজ করতেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে আঝাপুর, তারপরে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে যান। এ বছরের জানুয়ারি মাসে অডিট হওয়ার পরে ধরা পড়ে কুকীর্তি। জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের নির্বাহী আধিকারিক মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় ও আঝাপুরের উপপ্রধান অশোক ঘোষ জামালপুর থানায় এফআইআর করেন। ২১ জানুয়ারি থেকে টানা পাঁচ মাস ‘লুকিয়ে’ থাকার পরে গত মাসের শেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুকান্ত। দু’দফায় ৯ দিন পুলিশ হেফাজত হয় তাঁর। পুলিশ জানায়, ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী ২ কোটি টাকা সরকারি টাকা গায়েব করেছেন অভিযুক্ত।

পুলিশের দাবি, জেরায় স্বামীর কীর্তি নিয়ে কোনও আফশোস দেখাননি ঋষিতা। বরং তাঁর কথাবার্তায় মনে হয়েছে আনন্দেই ছিলেন তাঁরা। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছর সপ্তাহান্তে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তাঁরা। বিদেশ ঘুরে আসারও অভিজ্ঞতা রয়েছে ওই দম্পত্তির। পুলিশের দাবি, জেরায় সুকান্ত অভিযোগকারী ও পঞ্চায়েত কর্তাদেরও তছরুপের টাকার ভাগ দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। যদিও তার কোনও তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। তবে দিনের পর দিন সবার চোখ এড়িয়ে কী ভাবে টাকা সরানো চলত, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি পুলিশের। জামালপুর থানার দাবি, তদন্তে সাহায্যের জন্য ও কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে ১০০ দিনের কাজের টাকা তছরুপ করা যেতে পারে, তা বিস্তারিত জানতে বিশেষজ্ঞ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন